জামের বিচির উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
জাম একটি মৌসুমি ফল। পাকা জাম দেখতে গোলাকার ও কালো বর্ণের রসালো ফল। মুলত এই ফলটি গরম ও বর্ষার মাঝামাঝি একটি ফল। জাম খায়না এমন মানুষ খুজে পাওয়া যায়না। জামে রয়েছে প্রচুর উপকারি উপাদান। আমরা জাম খাওয়ার পরে এর বিচি অনায়াসে ফেলে দিয়ে থাকি। কিন্তু আমরা কি জানি জামের বিচিতে কি কি উপকার করে আমাদের। যদি জানা না থাকে তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।
জাম একটি মৌসুমি ফল। খুব কম সময়ের জন্য এই ফলটি পাওয়া যায়। জাম আমরা খালি মুখে এমনকি জাম অনেকে বেশ কিছু উপাদান মিশিয়ে খেলে এর স্বাদ বাড়ে অনেক। জামের বিচি আমাদের অনেক উপকারে আসে যা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভূমিকা
মৌসুমি ফল জাম। দেখতে কালো ও ভিতরে লাল এবং একটি বিচি থাকে। এ গাছটি গ্রামে অনেক দেখা যায়। গাছটি অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠে। কিন্তু এই ফলে রয়েছে অনেক উপকারি উপাদান। তাই বিশেষজ্ঞগনের মতে আমাদের সকলের প্রতিদিন জাম খাওয়ার প্রয়োজন।
আরো পড়ুন: মিষ্টি কুমড়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা
জামের বিচির উপকারিতা
আমরা সাধারণত জাম খাওয়ার পরে এর বিচি ফেলে দিয়ে থাকি। কিন্তু এই বিচি আসতে পারে আমাদের অনেক উপকারে। তাই আসুন জামের বিচি আমাদের কি কি উপকারে আসে সে সম্পর্কে জেনে নিয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জামের বিচি
জামের বিচি রক্তে সুগারের মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি যদি ডাযবেটিস জনিত সমস্যা ভূগে থাকেন এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে চান তাহলে অনায়াসে জামের বিচির গুড়া খেতে পারেন। এজন্য এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ জামের বিচির গুড়া মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। খুব ভাল ফল পাবেন।
আরো পড়ুন: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখার উপায়
পেট ভাল রাখে জামের বিচি
জামের বিচি আমাদের পেটের সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বদহজম এগুলো এখন আমাদের নিত্যদিনের সমস্যা। আর এ সমস্যার জন্য আমরা প্রতিদিন নানা ধরনের ঔষধ খেয়ে থাকি যার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন পার্শপতিক্রিয়া দেখা দিয়ে থাকে। আপনি যদি এ ধরনের সমস্যায় থাকেন তাহলে অনায়াসে জামের বিচি খেয়ে দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি কার্যকরী হতে পারেন। তার জন্য আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে জামের বিচি গুড়ো একগ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
উচ্চ রক্তচাপ দূর করতে জামের বিচি
আমাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় রয়েছে। আর এর কারনে কিডনি, হার্ট, চোখ সহ বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা নিয়ন্ত্রন করতে চান তাহলে জামের বিচি খেতে পারেন। এর জন্য জামের বিচি গুড়ো পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে জামের বিচি।
হৃৎপিন্ড ভাল রাখে
অনেক সময় দেখা যায় অনেকের হৃৎপিন্ড বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যদি কেউ তার হৃৎপিন্ডকে ভাল রাখতে চায় তাহলে জামের বিচির গুড়া খেতে পারেন। এটি হৃৎপিন্ড ভাল রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন: তুলসি পাতার ঔষধিগুন
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আমরা বিভিন্ন খাদ্যভাসে জর্জরিত। আর এ কারনে আমাদের শারীরিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেউ যদি জামের বিচির গুড়া প্রতিদিন খেতে পারে তাহলে প্রাকৃতিক ভাবে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই আপনি জামের বিচি নিয়মিত খেতে পারেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য।
রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে
জামের বিচিতে জাম্বোলাইন ও জাম্বোসাইন নামক উপাদান রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে থাকে।
ত্বক ও চুল ভাল রাখে
জামের বিচিতে রয়েছে ইলাজিক এসিড নামক এক ধরনের উপাদান। যা আমাদের ত্বক ও চুলকে ক্ষতিকারন আল্ট্রা ভায়েঅলেট রশ্মির প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
ঘনঘন মুত্রত্যাগ জনিত সমস্যা সমাধান
আর্যুুবের্দদের মতে জাম হল অ্যাসট্রিনজেন্ট অ্যান্টি ডিউরেটিক। যার ফলে ঘন ঘন মুত্রত্যাগ জনিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। হাইপোগ্লাইসেমিক গুন আছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
হাড়ের ক্ষয় রোধ করে
জামের বিচিতে রয়েছে লৌহ, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম যা হাড়ের ক্ষরোধ করতে দারুন কাজ করে। এমতাবস্থায় বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে জামের বিচি খাওয়া খুব উপকারি।
অন্যান্য উপকারি উপাদান
## হঠাৎ হাত পা কেটে বা ছিড়ে গেলে রক্ত বের হয়ে থাকে। রক্ত বন্ধ করার জন্য জামের পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে এর রস কাটা স্থানে লাগালে দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
## জামের বিচি গুড়া সকালে ২ চা চামচ এবং সন্ধ্যায় ২ চা চামচ নিয়মিত এক নাগারে ১৫ দিন খেলে বীর্য গাঢ় হয় এবং রতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
## কোন স্থান ক্ষত হলে বা গর্ত হয়ে থাকলে এবং সহজে শুকাচ্ছেনা এমন হলে জামের গাছের ছাল ছূর্ণ করে চালনিতে চেলে ক্ষত স্থালে দিনে ২ বার করে ৫-৭ দিন লাগালে সেরে যাবে।
## যাদের মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে এবং ঘা রয়েছে তারা জামের বিচি ছাড়িয়ে রস ও মজ্জা দিয়ে মাথায় লেপ দিলে ১০-১৫ দিনের মধ্যে উপকার পাওয়া যায়।
## আহারে রুচি না থাকলে পাকা জাম এর সাথে বিট লবন, মরিচ কুচি দিয়ে মেখে খেলে আহারে রুচি আসে।
জামের বিচি গুড়া করার পদ্ধতি
পাকা জামথেকে তার বিচি ছাড়িয়ে নিতে হবে। এর পর জামের বিচিগুলো পরিষ্কার পাতিতে সুন্তর করে ধুয়ে নিয়ে সেটি বিচিগুলো ৩-৪ দিন রোদে খুব ভাল করে শুকিয়ে নিতে হবে। এর পর জামের বিচির উপর থেকে খোসা ছাড়িয়ে নিলে এর ভিতরের সবুজ বর্নের বিচিটি বের হবে। এরপর সেই বিচিটি আবার রোদে খুব ভাল করে শুকিয়ে সেটি গুড়ো করে নিতে হবে। গুড়ো হয়ে গেলে সেটি ভাল করে চেলে নিয়ে একটি পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষন করে নিয়ে রেখে দিতে পারেন।
খাওয়ার নিয়ম
জামের বিচির গুড়ো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
উপসংহার
জামের বিচি আমরা জাম খাওয়ার পরেই তা ফেলে দিয়ে থাকি। কিন্তু আমরা জদি জামের বিচি সংরক্ষন করে রাখি তাহলে সারা বছর এ থেকে বিভিন্ন উপকারে আসতে পারে এই জামের বিচি বা বিচির গুড়া। যা প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের শরীরে কাজ করে। এর কোন পাশ্বপতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
শেষ কথাঃ যারা বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জামের বিচির গুড়া খাওয়া উচিত। প্রিয় পাঠক আশাকরি এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার উপকার হতে পারে। এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পেতে আমাদের পেজ ফলো রাখতে পারেন। ধন্যবাদ
আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url