বাড়ীতে বিড়াল পোষা কি জায়েজ
আমরা অনেকেই সখ করে বাড়ীতে বিড়াল পোষে থাকি। কিন্তু আমাদের অনেকের মধ্যে বিড়াল পোষা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আজ আপনি জানতে পারবেন বাড়ীতে বিড়াল পোষা নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ কিনা সে সম্পর্কে। তাই প্রিয় পাঠক মনোযোগ সহকারী পোস্টটি পড়ুন।
বিড়াল পোষা আমাদের অনেকেরই সখ। এছাড়াও কেউ আবার বাড়ীর প্রয়োজনে এই প্রাণীটি পোষে থাকেন। বিড়াল অনেক সুন্দর ও শান্ত প্রকৃতির একটি প্রাণী। এই প্রাণীটিকে অনেকে ভালো বেসে থাকে। কেউ কেউ আবার সারাক্ষন নিজের কাছে রাখে ও কোলে তুলে নিয়ে বেড়ায়।
ভূমিকা
বিড়াল একটি শান্ত ও লাজুক প্রকৃতির প্রাণী। আপনি বিড়ালকে ভালবাসলে সেও আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আপনার কাছাকাছি থাকবে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে প্রতি বছর ৮ আগস্ট সারা বিশ্বে আন্তজাতিক বিড়াল দিবস পালন করা হয়। বিড়াল আমাদের অনেক উপকারে আসে। এটি বাড়িতে থাকে এবং সব সময় মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে। বিভিন্ন রংয়ের পোশোমে ঢাকা থাকে বিড়ালের শরীর। যা লাড়তে নড়ম ও মোলায়েন হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি সুন্নত সম্পর্কে জানুন।
বাড়ীতে বিড়াল পোষা কি জায়েজ
ইসলামের দৃষ্টিতে বাড়িতে বিড়াল পোষা জায়েজ। বিড়াল পোষতে কোন বাধা নায়। তবে বিড়ালকে খাবার ও জীবন দারনের জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিড়ালকে রাসুলুল্লাহ (স) অনেক ভালবাসতেন এবং বিড়ালকে কষ্ট দিতে মানা করছেন। এছাড়াও বিড়াল নিয়ে বিভিন্ন হাদিস রয়েছে।
বিড়াল পোষা নিয়ে হাদিস কি বলে
হজরত কাবশা বিনতে কাব ইবনে মালিখ (রা) থেকে বর্নিত, আবু কাতাদা (রা) আমার কাছে আগমন করলেণ। আমি তার জন্য পানিভর্তি একটি অজুর পাত্র উপস্থিত করলাম। এমন সময় একটি বিড়াল তা থেকে পানি পান করলো। তিনি সে সময় বিড়ালটিকে কোন প্রকার আঘাত না করে বরং পানির পাত্রটি কাত করে দিলে যাতে তার পানি পান করতে সহজহয়। (নাসায়ি ৩৪২)
একদা হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। সাহাবয়ে কেরাম (রা) রাসুল (সা) কে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! জীব জন্তুর জন্যও কি আমাদের পুরস্কার আছে? তিনি বললেন হঁ্যা অবশ্যই, প্রত্যেক দয়াদ্র হৃদয়ের অধিকারীদের জন্য পুরস্কার আছে। (বুখারি-২৩৬৩)
আরো পড়ুন: রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল
রাসুল (সা) বলেন, বিড়ালের ওপর কোনো ধরনের অবিচার হলে গুনাহগার হতে হবে। এক মহিলাকে বিড়ালের জন্য আজাব দেওয়া হয়েছে। তার কারন হলো সে মহিলা বিড়ালটিকে আটকে রেখেছিলো এবং তাকে কোন খাবার এমনকি পানি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি, যার কারনে বিড়ালটি মারা যায়। আর এ অপরাধের কারনে মহিলাটি জাহান্নামে গেছে। সে যদি বিড়ালটিকে ছেড়ে দিতো তাহলে বিড়ালটি তার প্রয়োজনে জমিনে থাকা পোকামাকড় খেয়ে হলেও বাঁচতে পারতো। (মুসলিম ৫৬৪৫)
রাসুলুল্লাহ (সা) এর প্রিয় সাহাবি আব্দুর রহমান (রা) বেড়াল পোষতে ভালবাসতেন। একদিন জামার ভেতর করে একটি বিড়ালের ছানা নিয়ে রাসুল (সা) এর দরবারে উপস্থিত হন। এমন সময় বিড়াল ছানাটি হঠাৎ করে জামার ভিতর থেকে লাফ দিয়ে বের হন। এ সময় সকলে খুশি হন এবং রাসুল (সা) রসিকতা করে সাহাবি আব্দুর রহমান (রা) কে “ইয়া আবু হুরায়রা” অর্থা “হে বিড়ালের পিতা” বলে সম্বোধন করেন। এর পর থেকে আব্দুর রহমান (রা) আবু হুরায়রা নামে খ্যতি লাভ করেন। সেই দিন থেকে তিনি আবু হুরায়রা নামে পরিচিত হন বেশি। এবং তিনিও তাকে আবু হুরায়রা নামে পরিচয় দিতেন।
বিড়াল মুখ দিলে পানি নাপাক হয়কি
বিড়ালের ঝুটা বা মুখ পানিতে দিলে পানি নাপাক হয়না। সে পানি দিয়েও ওযু করা যাবে। তবে যদি আরো পানির ব্যবস্থা থাকে তাহলে অন্য পানি দিয়ে ওযু করতে হবে। আর যদি পানির ব্যবস্থা না থাকে তাহলে বিড়ালের মুখ দেওয়া পানি দিয়ে ওযু করা যাবে।
বিড়াল মারা যাবে কিনা
কোন প্রাণীকে মারা ঠিক নয়। রাসুলুল্লাহ (সা) কোন প্রাণীকে আঘাত করতে নিষেধ করেছেন। তবে প্রাণী যদি হিস্র হয় এবং মানুষের জন্য অকল্যানকর বা ক্ষতির কারন হয় তাহলে তাকে হত্যা করার কথা বলা হয়েছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে তাকে কোন কিছু দিয়ে আঘাত না করে যার মাধ্যমে প্রাণীটি সহজে ও অল্প সময় মৃত্যুবরন করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বিড়াল কেনা বা বেচা যাবে কিনা
বিড়াল কেনা করা জায়েজ নয় তবে কেউ যদি কাউকে উপহার স্বরুন দিতে চান তাহলে তা নেওয়া বা উপহার দেওয়া যাবে। তবে সেই প্রাণীর উপর অন্য কেউ যদি অধিকার না দেখায়।
কালো বিড়াল কি অকল্যানকর
আমাদের মধ্যে অকের মধ্যে একটি কুসংস্কার রয়েছে যে কালো বিড়াল থাকলে বা দেখলে মারতে হবে। কারন এটি শয়তানের বন্ধু বা শয়তাল বিড়ালের রুপ ধরে আছে। এছাড়াও কালো রংয়ের বিড়াল থাকলে বাড়িতে অশান্তি ও অভাব দেখা দেয়। কেউ যদি এইগুলো বিশ্বাস করে তাহলে সে শিরক করল। কারন অভাব অনোটন, অশান্তি, সুখ শান্তি সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে বিড়ালের পক্ষ থেকে নয়।
বিড়াল পোষার উপকারিতা
বিড়াল একটি শান্ত সভাবের প্রাণী। এটি বাড়িতে থাকতে ভালোবাসে। বিড়াল পোষলে সে আপনার খাবারের উৎসৃষ্ট খেয়ে বেছে থাকতে পারে। এছাড়াও বিড়াল বাড়িতে থাকলে বাড়িতে ইদুর, তেলাপোকার উপদ্র কমে যায়। ইদুরের কারনে বাড়ির ধান, চাল সহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই বাড়িতে ইদুরের উপদ্রো থাকলে বাড়িতে বিড়াল পোষতে পারেন।
উপসংহার
বিড়াল পোষলে আমাদের কোন ক্ষতি হয়না বরং বিড়াল সঠিক ভাবে লালনপালোন করলে আমাদের উভয় দিক থেকে লাভ হয়। এটি ইসলামের দিক থেকেও বৈধ তেমনি বাড়িতে থাকা ইদুর তেলাপোকার হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক আশা করি এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনি উপকৃত হবেন। তাই একটি লাইক বা কমেন করুন এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পেতে আমাদের পেজে ফলো রাখতে পারেন। ধন্যবাদ
আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url