প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখার ক্ষতি

আমাদের কর্মব্যস্ততার কারনে বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন সময় এদিক সেদিক যেতে হয়। এছাড়াও অনেক সময় কর্মক্ষেত্রে কাজ করার চাপে বা সুবিধামত টয়লেট না থাকার কারনে অনেক সময় আমরা প্রস্রাব বা পায়খানা অনেক ক্ষন আটকে রাখি। কিন্তু আমরা কি জানি প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখার ক্ষতি সম্পর্কে। তাই বিস্তারিত জানতে পুরো পোস্ট গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।
প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখার ক্ষতি

আমরা কমবেশি সবাই জানি প্রস্রাব বা পাায়খানা আটকে রাখা শরীরের জন্য খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এর পরেও আমরা বিভিন্ন কাজের চাপে, টয়লেট না থাকার কারনে বা ব্যস্ততার কারনে অথবা আলসেমি করেও প্রস্রাব বা পায়খানা চেপে রাখি। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন মারাক্তক ক্ষতি করে থাকে।

ভূমিকাঃ

কর্মব্যস্ততা বা ভ্রমনের কারনে আমরা অনেকক্ষন প্রস্রাব বা পায়খানা অনেকক্ষন আটকিয়ে রাখি। যার কারনে আমাদের অজান্তে আমাদের শরীরে সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিলতার। বিশেষ করে নারীরা এ সমস্যার ঝুকিতে রয়েছে অনেক বেশি। নারীরা সাধারনত সব জায়গায় টয়লেট সেরে নিতে পারেন না। যার কারনে তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুকির প্রবনতা অনেক বেশি।

প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখার ক্ষতি

আমাদের দেশের রাস্তাঘাটে পথচারীদের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। শহরের কোন কোন জায়গাও টয়লেট থাকলেও গ্রামের বা শহরতলী এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটে এর তেমন কোন ব্যবস্থা নাই। যার কারনে এই পথে চলাচলকারী পথচারীরা পড়েন ভোগান্তিতে। এছাড়াও কোথাও কোথাও থাকলেও তা আবার ব্যবহারের একেবারে অনুপোযোগী।
 
আর এ কারনে এমন সমস্যা এড়িয়ে চলতে অনেকে দির্ঘক্ষন প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখে ঘন্টার পর ঘন্টা। দীর্ঘক্ষন প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখার ফলে অনেক বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেছেন যা আমাদের জন্য মারাক্তক এজন্য মূত্রথলীর সংক্রমনসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে।

প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখলে কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে

অনেক কিডনি বিশেষজ্ঞ গনের মতে টয়লেটচেপে রাখার কারনে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন নারীরা, তবে পুরুষরাও অনেক জটিলতায় ভুগতে পারেন।

মুত্রনালির সংক্রমণ

অনেকক্ষন প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখা হলে সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয় ইউরিনারি ট্র্যাক ইনেফেকশন বা মূত্রনালির সংক্রমন যাকে সংক্ষেপে ইউটিআই বলা হয়। এ ধরনের সমস্যা সাধারণত হয়ে থাকে কেউ যদি বেশিক্ষন প্রস্রাব আটকে রাখ তাহলে যার ফলে ব্লাডারে যে জীবানু জন্মায় তা থেকে। যা পরবর্তীতে অন্য সমস্যাও তৈরি করে। যদি কারো বার বার এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয় তাহলে তার প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

কিডনির সমস্যা

বিশেষজ্ঞগণ জানিয়েছেন প্রস্রাবে ইউরিয়া এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো টক্সিন জাতীয় পদার্থ বিদ্যমান থাকে। যার ফলে কেউ যদি তা বেশিক্ষন চেপে রাখে তাহলে কিডনিতে স্টোন বা পাথর তৈরি করতে পারে। এর ফলে কারো কিডনিতে যদি পূর্বে থেকে কোন সমস্যা থাকে এবং সে যদি নিয়মিত প্রস্রাব আটকে রাখার ফলে তার কিডনির কার্যক্ষমতা দিন দিন কমতে থাকে।

ব্লাডার ফুলে যাওয়া

বিশেষজ্ঞগনের মতে প্রস্রাব আটকে রাখার ফলে ব্লাডার ফুলে যেতে পারে। এছাড়াও প্রস্রাব করার সময় একজন মানুষ অত্যন্ত ব্যথা অনুভত করতে পারে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ব্লাডারে সাধারণত ৪০০ থেকে ৫০০ মিলি লিটার প্রস্রাব জমা হয়ে থাকে যা দুই কাপের সমান। যখন এ পরিমান প্রস্রাব জমা হয়ে যায় তখন একটি সিগনাল আমার মস্তিষ্কে চলে যায় যে এখন ব্লাডার খালি করা প্রয়োজন। আর কেউ যদি ব্লাডার খালি না করে এবং নিয়মিত করতে থাকে বা প্রস্রাব আটকে রাখে তাহলে ব্লাডার ফুলে যায় এবং প্রস্রাথে থাকা বিভিন্ন টক্সিন শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি করে থাকে।

রক্তে সংক্রমণ

প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখার ফলে রক্তের বিভিন্ন সংক্রমণসহ বিভিন্ন প্রকার সংক্রমন হতে পারে।

ব্যকটেরিয়ার সংক্রমন

এছাড়াও টয়লেট বা প্রস্রাব আটকে রাখার ফলে শ্বাষকষ্ট বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বৃদ্ধি পেরে বলে জানিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞগণ।

প্রতিকার সমূহ

প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখা প্রতিকার করতে একটি দেশের সরকার, সচেতন মহল সহ সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসা জরুরী। সরকার দেশের বিভিন্ন রাস্তার নিদিষ্ট স্থানে ব্যবহার উপযোগী টয়লেন নির্মান ছাড়াও অফিস, আদালত, পার্ক, রিসোর্ট, কর্মক্ষেত্র, মার্কেট, শপিংমল ও কর্মক্ষেত্র সহ বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে ব্যবহার উপযোগী টয়লেট নির্মান করতে হবে। এবং শুধু নির্মান করলেই হবে না সেই সমস্ত টয়লেট সাধারণ মানুষকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে। আর এ ধরনের সমস্যা সমাধানে একজোগে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

উপসংহার

পরিশেষে বলা বাহুল্য যে, আমাদের যখন মস্তিষ্কে প্রস্রাব বা পায়খানা করার সিগনাল যায় আমাদের চেষ্ট করতে হবে তখনই আমাদের তা সেরে ফেলা। তাহলে আমরা আমাদের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা ও জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে পারি। এ ধরনের সচেতনতা আমাদের পরিবার সহ বন্ধু বান্ধব ও ছোট বড় সকলকে সচেতন করা জরুরী।

শেষ কথাঃ আর যায় হোক আমাদের প্রস্রাব বা পায়খানা লাগার সাথে সাথে আমাদের কোন একটি স্থান থেকে তা সেরে ফেলাই ভাল। এটি বেশিক্ষন আটকে রাখলে এবং তা নিয়মিত করলে আমাদের শরীরের দির্ঘমেয়াদী বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। প্রিয় পাঠক এই পোস্ট থেকে আপনি উপকৃত হয়ে থাকলে আপনার শুভাকাঙ্খীকে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url