লটকন খাওয়ার উপকারিতা ও লটকনের পুষ্টিগুন

লটকন দেখতে ছোট গোলাকার ও হালকা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। এ ফলটি দেখতে যেমন ছোট কিন্তু এর গুনাগুন রয়েছে অনেক। আমাদের মধ্যে অনেকেরই হয়তো জানা নাই যে লটকনে কি কি উপকারিতা রয়েছে। তাই আসুন লটকন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
লটকন খাওয়ার  উপকারিতা ও লটকনের পুষ্টিগুন

লটকন বিভিন্ন পুষ্টিগুনে পরিপূর্ণ একটি ফল। লটকনে রয়েছে বিভিটামিন, প্রোটিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর ফল। য আমাদের শরীরের নানান রোগ হতে মুক্তি দিয়ে থাকে। কাঁঠালের তুলনায় প্রায় দুই গুন পুষ্টিউপাদান রয়েছে ছোট্ট এই ফলটিতে।

ভূমিকা

লটকন বর্ষা মৌসুমের একটি রসালো ফল। ছোট এই ফলটির মধ্যে তিনটি করে রসালো দানা থাকে। এই ফলটি খুব অল্প সময়ের জন্য বাজারে পাওয়া যায়। থোকায় খোকায় এই ফলটি দেখতে অনেক চমৎকার লাগে। এই ফলটির মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ভিটামিনের ঘারটি পূরন সহ নানা উপকারিতা পাওয়া যায়।
 
আরো পড়ুন: আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

লটকনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

লটকন বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার সম্ভাবনাময় ফল হলো লটকন। এটি এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। এ ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea motleyana । গাছটি দক্ষিণ এশিয়ার বুনো গাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বানিজ্যিক ভাবে চাষ হয় লটকন। এর গাছ ৯-১২ মিটাল লম্বা হয় এর কান্ড বেটে ও উপরাংশ ঝোপালো। এই ফলটি নরসিংদী জেলায় বেশি চাষ হলেও সিলেট, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাজীপুর জেলাতেও বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লটকন চাষ করা হচ্ছে।

লটকনের কয়েকটি পরিচিত নাম

স্থান ভেদে এই ফলটি নানা নামে পরিচিত। যেমন হাড়ফাটা, ডুবি, বুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ, কিছুয়ান ইত্যাদি।

লটকন খাওয়ার উপকারিতা

সাইজে ও দেখতে ছোট হলেও এ ফলের রয়েছে অনেক উপকারিতা। আপনি জানলে অবাক হবেন এ ফলের উপকারিতা সম্পর্কে। তাই আসুন লটকন খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
 
### ভিটামিন সি এর চমৎকার উৎস হলো লটকন। এছাড়াও লটকনে রয়েছে থায়ামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। কারো মুখে যদি ঘনঘন ঘা হয় তাহলে প্রতিদিন ২-৩ টি করে লটকন খেতে পারেন। এতে করে শরীরের ভিটামিন সি এর অভাস পুরন হবে।

### শরীরের পানির সমতা ধরে রাখতে লটকন খুব ভাল কাজ করে। গরমে পানির অভাবে ডিহাইড্রেশান থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে লটকন।

### মুখে অবসাদ দেখা দিলে বা কোন কিছু খাওয়া থেকে রুচি উঠে গেলে আপনি অনায়াসে লটকন খেতে পারেন। লটকন খেলে মুখে রুচি ফিরে আসে।

### হাড় ও দাঁত বজবুত রাখতে লটকন খুব ভাল কাজ করে। আপনি যদি প্রতিদিন অন্তত ২-৩টি করে লটকন খেতে পারেন তাহলে আপনি অনেক উপকারি পাবেন।

### ত্বক ভাল রাখে লটকন। লটকন খাওয়ার ফলে শরীরের ত্বকের সৌন্দয্য ও উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়।

### বর্ষা মৌসুমে ভেজা শ্যাতস্যাতে আবহাওয়ার কারনে অনেকের শরীরে এলার্জি বা চর্ম রোগের দেখা দিতে পারে। যা লটকন খাওয়ার ফলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

### গরমে তৃষ্ণা মিটাতেও খুব ভাল কাজ করে লটকন। এ ফলের মধ্যে জলিয় উপাদানের পরিমান বেশি থাকায় ডিহাইড্রেশন কাটিয়ে উঠতে লটকন খুব ভাল কাজ করে থাকে।

### রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখ লটকন। এ ফলের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি না থাকার কারনে ডায়াবেটিস রোগীরাও অনায়াসে এই ফলটি খেতে পারেন।

### কাঁঠালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন পুষ্টিউপাদান রয়েছে লটকনে।

### বমি ভাব দুর করতে লটকনের থাকা পুষ্টিগুন খুব ভাল কাজ করে।

### লটকন এমন সব উপাদানে পরিপূর্ণ যে এই ছোট ফলটি ক্যান্সারসহ নানা জটিল ও কঠিন অসুখ সারাতে খুব ভাল কাজ করে।

লটকনের পাতার উপকারিতা

ফলের পাশাপাশি লটকনের পাতাতেও রয়েছে ঔষুধী গুন। এর পাতা ও শিকড় খেলে পেটের নানা অসুখ ও জ্বর ভালো হয় বলে অনেক বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। এছাড়াও লটকনের পাতার গুঁড়ো ডায়ারিয়া দূর করতে খুব ভাল কাজ করে থাকে।

লটকনের বীজের উপকারিতা

লটকনের বীজ গনোরিয়া রোগের প্রতিষেধন হিসেবে কাজ করে।

লটকনের পুষ্টিগুন

বর্ষা মৌসুমের এই ছোট্ট ফলটিতে রয়েছে নানান পুষ্টিগুন। এই ফলটি যেমন মুখরোচক তেমনি এর পুষ্টিগুনও অনেক বেশি। ১০০ গ্রাম লটকনে পাওয়া যায় ৯২ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি। এছাড়াও ভিটামিন সি রয়েছে ১৭৮ মিলিগ্রাম, শর্করা ১৩৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৭৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৬৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ১৪.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি-২ ০.২০ মিলিগ্রাম। এছাড়াও ১০০ গ্রাম লটকনে ১.৪২ গ্রাম প্রোটিন ও ০.৪৫ গ্রাম ফ্যাট, ৫.৩৪ মিলিগ্রাম আয়রন, ৯২ কিলোক্যালরি, ৯ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ক্রোমিয়া পাওয়া যায়।

উপসংহার

লটকন খুব সামান্য একটি ফল। এ ফলের সাথে বর্তমানে অনেকে হয়তো পরিচিত নাই। কিন্তু লটকনে রয়েছে প্রচুর পরিমান পুষ্টি ‍উপাদান যা আমাদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সহ বিভিন্ন রোগ মুক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে লটকন। লটকন এমন একটি ফল যার মধ্যে কোন ক্ষতিকর উপাদান না। যার কারনে এই ফলটি সকল বয়সী মানুষ অনায়াসে খেতে পারেন।

শেষ কথাঃ লটকন হালকা হলুদ বর্নের ও ভিতরে রসালো দানাযুক্ত একটি ফল। এই ফলটির মধ্যে রয়েছে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুনে পরিপূর্ণ। তাই প্রিয় পাঠক যদি লটকন খেতে অপছন্দ করে থাকেন তাহলে আপনি আজ থেকেই লটকন খেতে পারেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url