কুরবানি করা কাদের ওপর ওয়াজীব

মুসলিম ধর্মে কুরবানি করার গুরুত্ব অনেক। কুরবানি করা ওয়াজিব যার গুরুত্ব ফরজ ইবাদতের কাছাকাছি। তবে কুরবানি সকল শ্রেণির মানুষের উপর ওয়াজিব নয়। ফরজ সহ অন্যান্য সুন্নত, ওয়াজিব ইবাতদ সকলের উপর অর্পিত হয়ে থাকলেও কুরবানি করার ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন রয়েছে। তাই আসুন কুরবানি করা কাদের ওপর ওয়াজীব সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
 কুরবানি করা কাদের ওপর ওয়াজীব

কুরবানী করা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কুরবানি করা আমাদের অর্থাৎ মুসলিম জাতীর আদি পিতা হযরত ইব্রাহিত (আ) এর সুন্নত যা শেষ নবী আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর সকল উম্মতের উপরও সুন্নত করা হয়েছে।

ভূমিকা

ইসলাম ধর্মে কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত এই ইবাদতগুলো অবশ্যই মানতে ও আমল করতে হবে। তবে প্রথম তিনটি সকল মুসলমানদের জন ফরজ হলেও পরের দুটি যাদের সামর্থ অর্থাৎ নিদিষ্ট পরিমান সম্পদের অধিকারি শুধু তাদের ওপর আমল করা ফরজ। এই রুপ কুরবানি করাও সকল মুসলমানদের উপর ওয়াজিব করা হয়নি। কারণ ইটিও শুধু মাত্র যাদের নিদিষ্ট পরিমান সম্পদ রয়েছে তাদের জন্য। 
 
আরো পড়ুন: ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত

কুরবানি করা কাদের ওপর ওয়াজীব

আল্লাহতালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য জ্বিলহজ মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল কুরবানি করা। কুরবানি করার জন্য যাদের উপর যাকাত দেওয়া ফরজ বা যে পরিমান সম্পদ থাকলে যাকাত দেওয়া ফরজ সেইরুপ কুরবানিও কিন্তু এর কুরবানির ক্ষেত্রে সামান্য কিছু পরিবর্তন রয়েছে। যা হলো যাকাতের ক্ষেত্রে সম্পদ যদি এক বছর পর্যন্ত থাকে তাহলে যাকাত দিতে হয় কিন্তু কুরবানি ক্ষেত্রে যদি কারো সারা বছর সম্পদ না থাকে আর যদি জ্বিলহক মাসের ১০, ১১, ১২ তারিখের মধ্যে সেই পরিমান সম্পদের মালিক হয় তাহলে তাকে কুরবানি করতে হবে। 
যাকাতের জন্য সাড়ে সাত ভরি সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপা বা সমপরিমান অর্থ থাকলে তাকে যাকাত আদায় করতে হবে। কারো কাছে যদি সোনা বা রৌপা না থাকে তাহলে ব্যবসার মাল এর সাথে যুক্ত হবে। তবে কুরবানির ক্ষেত্রে উক্ত সম্পদের সাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পত্তি, আসবাবপত্র যুক্ত হবে। এখন আসুন কাদের ওপর কুরবানি করা ওয়াজীব সম্পর্কে জানা যাক।

১। মুসলমানঃ 

কুরবানি করার জন্য প্রথমে তাকে মুসলমান হতে হবে। কারন কোন অমুসলিম এর উপর কুরবানি করা ওয়াজিব নয়। কারণ অমুসলমানদের কোন ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সে কোন ভাল কাজ করতে পারে সে জন্য আল্লাহ তায়া তাকে পৃথিবেতেই তার ফল দিবেন। সেই জন্য কুরবানী করার প্রথম শর্ত হলো তাকে মুসলমান হতে হবে।

২। প্রাপ্ত বয়স্কঃ 

কুরবানি করার দ্বিতীয় শর্ত হলো তাকে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে কোন নাবালেক বা যার বয়স হয়নি এমন ব্যক্তি কুরবানি করতে পারবেনা। যদিও সে অর্থ সম্পদের মালিক হয় তবুও সে কুরবানি করতে পারবেনা। সেই জন্য কুরবানি করার জন্য প্রথমত তাকে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে।

৩। সুস্থ জ্ঞান সম্পূর্ণঃ 

কুরবানি করার জন্য অবশ্যই তাকে সম্পূর্ণ জ্ঞান বুদ্ধি থাকতে হবে। ইসলামে কোন পাগল বা যার জ্ঞান নাই তার কোন ইবাদত হবেনা। সেই জন্য কুরবানি করার জন্য অবশ্যই তাকে জ্ঞান সম্পূর্ণ হতে হবে।

৪। প্রয়োজনীয় অর্থ সম্পদ থাকতে হবেঃ 

ইসলাম কখনো কাউকে কোন কিছু জোর করে চাপিয়ে দেয়না। সেই জন্য একে শান্তি ধর্ম বলা হয়। অর্থাৎ কুরবানি করার জন্য সেই ব্যক্তিকে অবশ্যই শরিয়তের বিধান মোতাবেক স্বচ্ছল হতে হবে।

কুরবানির প্রকারভেদ

কুরবানি কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। আসুন সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

১। ওয়াজিব কুরবানিঃ 

ওয়াজিব কুরবানি বলতে শুধুমাত্র শরিয়তের বিধান মোতাবেক যাদের প্রয়োজনীয় অর্থ সম্পদ রয়েছে তাদের উপর কুরবানি করা ওয়াজিব। সেই ক্ষেত্রে সে ব্যক্তি কুরবানির মাংস নিজে খেতে পারবে গরিব মিস্কিন দের মাঝে বিতরন করবে এবং আত্মিয়স্বজনদের দিবে। অর্থাৎ সবাই সেই কুরবানির মাংস খেতে পারবে।

২। নফল কুরবানিঃ 

নফল কুরবানি বলতে কেউ যদি নিদিষ্ট অর্থ সম্পদের মালিক নয় তার পরেও যদি সে কুরবানি করতে চাই তাহলে সেটি নফল কুরবানি। তবে সম্পদের মালিক না হয়েও যদি কুরবানি করতে চাই এবং পশু ক্রয় করে তাহলে তাকে অবশ্যই কুরবানি করতে হবে। কারন পশু কুরবানির উদ্দেশ্যে ক্রয় করার সাথে সাথে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যাবে। কারন তার সামর্থ না থাকা সত্বেও পশু ক্রয় করার কারনে তার উপর কুরবানি করা ওয়াজিব। এই ধরনের কুরবানির মাংস উপরোক্ত নিয়মে সবাই খেতে পারবে।

৩। মানত কুরবানিঃ 

কোন কারনে কোন ব্যক্তি যদি তার কাজ হাসিলের জন্য কুরবানির মানত করে থাকে তাহলে সেই কুরবানিকে মানত কুরবানি বলা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে, এ ধরনর কুরবানির মাংস শুধুমাত্র গরিব মিস্কিনরা খেতে পারবে। কোন অবস্থায় কুরবানি দাতা বা ধনী ব্যক্তি এই ধরনের কুরবানির মাংস খেতে পারবে না।

৪। ওছিয়ত কুরবানিঃ 

এ ধরনের কুরবানি মানত কুরবানির মতই। যে কুরবানি করবে বা কোন ধনী ব্যক্তি এই কুরবানির মাংস খেতে পারেনা এর একমাত্র হক হলো সাধারণ গরিব ও ফকিম মিস্কিনরা।

কখন কুরবানি করা যায়না

যখন কোন ব্যক্তি সফরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে থাকে অর্থা অনেক দুরে কোন কাজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তাহলে তার প্রতি কুরবানি করা ওয়াজিব নয়। তবে তার দুরুত্ব হতে হবে সর্বনিম্ন ৭৮ কিলোমিটার। যদি ৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে সফর হয়ে থাকে তাহলে তাকে স্ব-স্থানের ধরা হয়ে থাকে এবং তাকে কুরবানি দিতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি যতি চাকরি বা ব্যবসার কাজে তার বাড়ি থেকে অনেক দুরে অবস্থান করে তাহলে তাকে কুরবানি দিতে হবে।

কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানি করতে হবে

সাধারণত ৬ প্রজাতির পশু দ্বারা কুরবানি করা ওয়াজিব। তার মধ্যে গরু, মহিষ, উট, দুম্বা, ছাগল, ভেড়া। এ কয়টি পশু ছাড়া কুরবানি করা যাবেনা। তাই কেউ যদি কুরবানি করতে চাই তাহলে তাকে অবশ্যই এ প্রজাতির পশু দ্বারা কুরবানি করতে হবে।

কেমন পশু দ্বারা কুরবানি করতে হবে

কুরবানি করার জন্য অবশ্যই সুস্থ সবল ও নিখুত পশু ভালভাবে দেশেশুনে ক্রয় করতে হবে। কারন কোন রোগা বা খুতযুক্ত প্রাণি দ্বারা কুরবানি করা যায়েজ নয়। সেক্ষেত্রে যে ব্যক্তি কুরবানি দিবেন তাকে অবশ্যই খুব সতর্ক দৃষ্টি দিয়ে পশু ক্রয় করতে হবে।

কুরবানি করার ফজিলত

কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য আল্লাহর রাস্তায় নিদিষ্ট দিনে পশু কুরবানি করে থাকে তাহলে হাদিসে বর্নিত আছে ঐ ব্যক্তিকে যে পশু কুরবানি দিবে সে পশুর প্রতিটি পশমের বিপরীতে একটি করে সওয়াব দিবেন। সুবহানআল্লাহ.

উপসংহার

কুরবানি করা হযরত ইব্রাহিম (আ) এর সুন্নত। যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তবে কুরবানি করার জন্য কিছু নিদিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে যেগুলো আমাদের মেনে কুরবানি করতে হবে। এবং উক্ত কুরবানির মাংস আল্লাহ তালার বিধান অনুয়ায়ী গরীব মিস্কিন, প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের হক সঠিক ভাবে আদায় কতে পারি।

শেষ কথাঃ আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি করা আমাদের নৈতিক দ্বায়িত্ব। কুরবানির পাশাপাশি আমাদেরকে আল্লাহর অন্যান্য বিধান সঠিক ভাবে মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে কোন হারাম উপার্জন করা অর্থ দিয়ে পশু ক্রয় করে কুরবানি করলে সেই কুরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হবেনা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url