কাঁচা কলা খাওয়ার পুষ্টি উপাদান-কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা এমন একটি সহজলভ্য ফল যা সারা দেশেই মোটামুটি সারা বছর পাওয়া যায়। পাকা কলা সকালে নাস্তা করা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত যে কোন সময় খাওয়া যায়। পাকা কলায় যেমন রয়েছে পুষ্টি উপাদান তেমনি কাঁচা কলাতেও রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন সহ উপকারী সব পদার্থ যা আমাদের সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করে।
 
কাঁচা কলা খাওয়ার পুষ্টি উপাদান-কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলার এমন একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা হল এটি পাকা অবস্থাতেও খাওয়া যায় আবার কাঁচা অবস্থাতেও এর উপকারিতার জুরি মেরা ভার। তাই আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় সবজির হিসাবে প্রতিদিন কলা রাখতে পারেন।

ভূমিকা

কাঁচা কলা শুধু সবজির চাহিদায় পুরন করেনা বরং এটি আমাদের খাদ্য চাহিদার পাশাপাশি আমাদের শরীরের নানা রকম সমস্যা সমাধানের কাজ করে থাকে। পাকা কলা বা কাঁচা কলা খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এটি পুষ্টিগুনে পরিপূর্ণ একটি ফল বা সবজি।
 
আরো পড়ুন: করলা রস খাওয়ার উপকারিতা সমূহ

কাঁচা কলার পুষ্টিগুন

কাঁচা কলায় অনেক বেশি মাত্রায় রয়েছে স্টার্চ বা শ্বেতসার, শর্ট-চেইন, ফ্যাটি অ্যাসিড ও নানার ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। এছাড়াও এতে রয়েছে পটাশিয়াম, খাদ্য আঁশ ও প্রোটিন। এছাড়াও একটি মাঝারি সাইজের কাঁচা কলাতে থাকে ৮১ ক্যালরি। এছাড়াও এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেড, ফাইবার, ভিটামিন -বি৬, ভিটামিন-সি এবং আরও নানা উপকারী উপাদান।

কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা কলা সবজি হিসাবে খাওয়ার ফলে আমাদের নানা ধরনের উপকারিতা হিসাবে কাজ করে এই কাঁচা কলা। আসুন জানা যাক আপনি যদি কাঁচা কলা খেতে পারেন তাহলে কি কি উপকারিতা পাবেন।

ওজন কমায় কাঁচা কলা

আপনি যদি আপনার ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকেন এবং আপনার ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই নিয়ে চিন্তায় থাকেন তাহলে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় কাঁচা কলা রাখতে পারেন। কাঁচা কলাতে রয়েছে ফাইবার যা আপনি খাওয়ার পরে আপনার পেটকে অনেক সময় ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আঁশযুক্ত খাবার যার ফলে পেটে জমে থাকা মেদ কমাতেও এটি খুব ভাল কাজ করে থাকে।
 
আরো পড়ুন: সজনে পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে কাঁচা কলা

আপনি যদি ডায়াবেটিস জনিত সমস্যায় থাকেন তাহলে কাঁচা কলা খেতে পারেন। এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রনে খুব ভাল কাজ করে থাকে। এটি একটি আঁশযুক্ত খাবার হওয়ায় রক্তে শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে ভিটামিন বি-৬ যা গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে টাইপ-টু ডায়াবেটিস প্রতিরোধক হিসাবে সাহায্য করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় কাঁচা কলা

পাকা কলার মত কাঁচা কলাতেও রয়েছে প্রচুর পরিমান পটাশিয়াম। এক গবেষনায় দেখা গেছে একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষ প্রতিদিন ৪৭০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম গ্রহণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি তার কমে যায়। তবে এই পটাশিয়াম আমার সবার জন্য নিরাপদ নয়। যাদের উচ্চ রক্তচাপ অথবা কিডনির রোগে আক্রান্ত জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কাঁচা কলা খাওয়ার ব্যপারে সতর্ক থাকতে হবে।

খারাপ ব্যাকটেরিয়া দুর করে কাঁচা কলা

কাঁচা কলা আঁশযুক্ত সবজি হওয়ায় এটি খুব সহজে হজম হয়ে যায়। কাঁচা কলা খুব সহজে পেটের ভিতরের খারাপ ব্যাকটেরিয়া দূর করে দিতে সাহায্য করে। তবে কারো যদি পেট ফোলার সমস্যা থাকে তাহলে কাঁচা কলা না খাওয়াই ভালো। কাঁচা কলা অনেক সময় কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের মত সমস্যা বাড়িয়ে দিয়ে থাকে।

ডায়রিয়ার কাঁচা কলা

কারো যদি ডায়রিয়া জনিত সমস্যা থাকে তাহলে তাকে ডাক্তার কাঁচা কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কাঁচা কলাতে থাকে এনজাইম যা ডায়রিয়া এবং পেটের নানা ইনফেকশান দূর করে।

বিপাক বাড়ায় কাঁচা কলা

কাঁচা কলায় আছে অনেক প্রয়োজনীয় খনিজ ও পুষ্টি উপাদান যা চর্বিকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। আর এতে রয়েছে ভিটামিন বি-৬ যা শরীরে এনজাইম ভাঙ্গতে শক্তি যোগায়।

কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে কাঁচা কলা

কাঁচা কলা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি কিডনি বা বৃক্কের কাজে সহায়তা করে। কোন ব্যক্তি যদি প্রতিদিন কাঁচা কলা খেতে পারে তাহলে তার কিডনি ক্যান্সারের মত রোগ দুর হয়ে যায়।

অ্যাসিডিটি বা গ্যাস নিয়ন্ত্রন করে কাঁচা কলা

যারা অ্যাসিডিটি বা গ্যাস জনিত সমস্যা রয়েছে তারা তাদের খাদ্য তালিকায় কাঁচা কলা রাখতে পারেন। কারন কাঁচা কলা অ্যাসিডিটি বা গ্যাস নিয়ন্ত্রনে খুব ভাল কাজ করে থাকে।

হাড় মজবুত করে কাঁচা কলা

আপনি যদি নিয়মিত কাঁচা কলা খেতে পারেন তাহলে এটি আপনার শরীরের হাড় মজবুত করার পাশাপাশি হাড় ক্ষয় রোধ করে। কাঁচা কলায় ব্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস থাকায় হাড়ের জন্য অনেক ভূমিকা পালন করে।

কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে কাঁচা কলা

কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে শরীর থেকে সকল প্রকার ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, জীবানু ও ইনফেকশনকে দূর করে কোলনকে ভাল রাখে। দীর্ঘমেয়াদী কোলন সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে কাঁচা কলা।

ত্বকের সৌন্দয্য বৃদ্ধি করে

কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধি করে ত্বককে সুন্দর করতে সাহায্য করে কাঁচা কলা। যার ফলে আপনার ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে কাঁচা কলা।

কলার মোচার উপকারিতা

কলা এমন একটি উপাদান যা কাঁচা অবস্থায়, পাকা অবস্থায় এমনকি এর মোচা ও কলা গাছের ভিতরের শ্বাষ (স্থান ভেদে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত) সকল কিছুই খুবই অপকারী। কলার মোছা রান্না করে খাওয়া যায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমান আয়রন যা শরীরের আয়রনের ঘারতি পুরন করতে সহাযতা করে। বিশেষ করে মহিলাদের বাচ্চা প্রসবের পর ডাক্তারগন সেই সকল মা দেরকে কলার মোচা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেক সময়। এটি খুব সুস্বাদু একটি খাবার।

উপসংহার

কলা খুব উপকারি ও বিভিন্ন উপাদানে ভরপুর একটি খাবার। এটি পাকা অবস্থায় যে কোন সময় খাওয়া যেতে পারে এছাড়াও এটিকে কাঁচা অবস্থাতে রান্না করে খাওয়া যায়। তাই আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়ম অনুসরন করে কলা রাখতে পারেন। এটি যেমন সুস্বাদু তেমনি এর মধ্যে থাকা জাদুকরী উপাদান আপনার শারীরিক নানা রকম জটিলতা দুর করে আপনাকে দিবে সুস্থ্য শরীর।

শেষ কথাঃ কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম, ভিটামিন-বি৬ ও ভিটামিন সি সহ নানান প্রয়োজনীয় উপাদান যা আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত্য প্রয়োজনীয়। তাই আপনি যদি কাঁচা কলা অথবা পাকা কলা পছন্দ না করে থাকেন তাহলে আজ থেকেই কাঁচা ও পাকা কলা খাওয়া শুরু করুন। এরকমন আরো গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পেতে আমাদের পেজকে ফলো করুন। এই পোস্টটি সম্পর্কে কোন মতামত থাকলে কমেন্টএর মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url