রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

রাসেল ভাইপার সাপ বর্তমানে গোটা নেট দুনিয়া সহ বাংলাদেশের শীর্ষ একটি সংবাদ বলে অবিহিত করা হয়েছে। রাসেল ভাইপার সাপ বর্তমানে মানুষের মধ্যে বড় আতংকের সৃষ্টি করেছে। রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে অনেকেরই কৌতুহলের শেষ নাই। তাই প্রিয় পাঠক আপনি যদি রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়ুন।

রাসেল ভাইপার সাপ

রাসেল ভাইপার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শৃলঙ্কাতে বেশি দেখা যায়। তবে সম্প্রতি পদ্মার তীরবর্তি এলাকাগুলোতে এ সাপের আনাগোনা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ধারনা করা হচ্ছে এই সাপটি ভারত থেকে পদ্মা নদী দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে।

রাসেল ভাইপার সাপের নামকরন

আমাদের অনেকের কাছে জানার কৌতুহল এই রাসেল ভাইপার সাপটি কিভাবে নামকরন করা হলো সে বিষয় সম্পর্কে। তাই আসুন কিভাবে এই বিষধর সাপের নাম রাসেল ভাইপার করা হলো সে সম্পর্কে জানা জাক।

আরো পড়ুন: চোখের নিচের কালো দাগ দুর করার উপায় 

জানা গেছে স্কটিস সার্জন ও প্রকৃতিবিদ প্যাট্রিক রাসেলের নামের সাথে মিলকরণ করে এই সাপের নাম রাখা হয়েছে রাসেল ভাইপার। প্যাট্রিক রাসেল ১৭২৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি এডিনবার্গ হাইস্কুলে রোমান এবং গ্রিক ক্লাসিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং আলেকজান্ডার মনরোর অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিনে অধ্যায়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৭৫০ সালে একজন ডাক্তার অফ মেডিসিন হিসাবে স্নাতক অর্জন করেন।

আরো পড়ুন: লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা 

১৭৮১ সালের দিকে রাসেল ভারতে এসে ভারতের প্রাকৃতিক ইতিহাস বিষয়ে অধ্যায়ন শুরু করে। সেই সময় কর্নাটক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তারা সাপে কামড়ের সমস্য নিয়ে ভিষন উদ্বেগ্ন হয়ে পড়েন। উক্ত সময় মানুষ বিষধর সাপ সনাক্তর জন্য প্যাট্রিক রাসেলকে নিযোজিত করেন। তিনি সাপগুলোকে সনাক্ত করেন। সেই সকল সাপের মধ্যে একটি কাতুকা রেকুলা পোদা যা প্রাণঘাতী হওয়ার ক্ষেত্রে কোবরার পরের অবস্থানেই ছিল। এটিই বর্তমানে রাসেলস ভাইপার নামে পরিচিত।

বর্তমানে রাসেল ভাইপাই সাপের কামড়ের ফলে খুব কম মানুষ জীবিত আছে। এই সাপের বিষ খুব মারাক্তক। এই সাপ একবার কামড়ের ফলে অন্যান্য সাপের তুলনায় অনেক বেশি বিষ কামড়ের ক্ষত স্থানে ঢেলে দিতে পারে। তবে অনেকের মতে এই সাপটি মানুষকে তেড়ে এসে কামড় দেয় তা কিন্তু সঠিক নয়। এই সাপটি খুব ধিরগতি সম্পূর্ণ একটি সাপ যা অন্যান্য সাপের তুলনায় ধীরে চলাচল করে।

একটি প্রাপ্ত বয়ষ্ক রাসেল ভাইপার খুব কম চলাফেরা করে। এক কথায় বলা যায় এই সময় সাপটি খুব আলসে প্রকৃতির হয়ে থাকে। এই সাপটি সাইজের তুলনায় তুলনামুলক মোটা এবং মাথা ত্রিকোনাকার হয়ে থাকে। এই সাপটি ধিরগতীসম্পূর্ণ হলেও এর কামড়ের গতি অন্যান্য সাপের তুলনায় অনেকগুনে বেশি। সে খুব অল্প সম্পয়ে আঘাত করতে পারে।

এই সাপটি বর্তমানে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোদাগাড়ী, চারঘাট সহ কুষ্টিয়া, নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, পাবনা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, ‍কুষ্টিয়া, যশোর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, চাঁদপুর সহ নোয়াখালী ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সনাক্ত করা গেছে।

এই সাপের কামড়ে খুব কম লোক জীবিত থাকার খবর পাওয়া গেছে। এই সাপ কাউকে ছবল দিলে তার ২০% বাচার সম্ভাবনা থাকে। যার মুল কারন হলো এ সাপের বিষের পতিক্রিয়া ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজন এন্টিভেনম যা আমাদের দেশের নাই।

এই সাপটি সাধারণত নিজেরা কোন কারনে আক্রান্ত বা রেগে না থাকলে সাধারণত তেড়ে এসে কামড় দেয়না। এই সাপের বিষধান অনেক লম্বা এবং এ সাপের কোন অবদান আমাদের দেশের প্রকৃতিতে বা জলবায়ুতে নাই। এই সাপটি খুব দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। বর্তমান সময় পর্যন্ত যাজা গেছে অন্যান্য সাপ এক ধরনের বিষ ধারন করতে পারলেও রাসেল ভাইপার ৫-৬ ধরনের বিষ ধারন করে থাকে।

রাসেল ভাইপার খুব দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারা সাপগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই সাপ একসাথে ৩০ থেকে ৮০ টি পর্যন্ত বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। এ সাপটি মুলত মে থেকে নভেম্বর মাস এর মধ্যে বাচ্চা দিয়ে থাকে। তবে জুন ও জুলাই মাসের বাচ্চা প্রসবের মাত্রা বেশি থাকে।

রাসেল ভাইপার সাপের প্রধান খাবার

এরা সাধারণত ইদুর, টিকটিকি বা অন্যান্য সরীস্রীপ জাতীয় প্রাণী খেয়ে থাকে। তবে এদের প্রধান খাবার হলো ইঁদুর। আর এর খোনে এরা বসতবাড়ীতেও প্রবেশ করতে পারে।

রাসেল ভাইপার থেকে সচেতন থাকার উপায়

রাসেল ভাইপার সাধারণত একটু মোটা স্বাস্থ্যের হয়ে থাকে। তাই অনেকে একে অজগরের বাচ্চা হিসাবে ভুল ভেবে কামড়ও খেয়েছে। এই সাপটি গায়ের উপর হালকা বাদামি ও কালো গোলাকার ছোপ রয়েছে। সাপ থেকে সচেতন থাকার জন্য বসত বাড়ী সমসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোথায় কোন ময়লা আবর্জনা রাখা যাবেনা। বাড়ীর চারি পাশে কারেন্ট জাল দিয়ে ঘিরে রাখলে ভাল হয়। এছাড়াও যারা ক্ষেতে খামারে কাজ তারা অবশ্যই ‍খুব সর্তকতা অবলম্বন করে কাজ করতে হবে এবং মোটা হাটু পর্যন্ত বুট জুতা পরে কাজ করতে হবে।

রাসেল ভাইপার কামড় দিলে কি করবেন

কাউকে যদি রাসেল ভাইপার কামড় দিয়ে থাকে তাহলে আতঙ্ক হওয়া যাবেনা। কোন ওঝা বা কবিরাজের কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। দ্রুত হাসপাতালে আসতে হবে এবং এন্টিভলেম দিতে হবে।

শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক আশা করি এই পোস্টের মাধ্যমে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। নিজে সচেতন থাকুন অন্যকে সচেতন থাকার জন্য পোস্টটি শেয়ার করুন। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পেতে আমাদের পেজ ফলো রাখতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url