পহেলা বৈশাখ এর ১০ টি বাক্য ও পহেলা বৈশাখ এর কবিতা
পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য
১. বাংলাদেশের ১৪ই এপ্রিল এবং ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গে ১৫ই এপ্রিল প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়।
২. পহেলা বৈশাখ হলো একটি সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িত উৎসব, তাই এই উৎসবে দেশের সকল ধর্মের মানুষ যেমন মুসলিম, হিন্দু, বোদ্ধ, খ্রিষ্টান অংশগ্রহণ করে থাকে।
৩. বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিকে বলা হয় পহেলা বৈশাখ। তাই এ দিনেই পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়।
৪. সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা সালের প্রবর্তন করেন। আর এ সময় থেকেই পহেলা বৈশাখ প্রচলন শুরু হয়েছে।
৫. এ দিন পান্তা ইলিশের মধ্য দিয়ে শুরু করা হয় এর পর থাকে বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখি, হাতি, ঘোড়া, পেঁচার মুখোশ নিয়ে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্র।
৬. নিসন্দেহে পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালী জাতীর জন্য একটি অসাম্প্রদায়িক আনন্দের উৎসব।
৭. পহেলা বৈশাখের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো হালখাতা। হালখাতা বলতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নতুন খাতাকে বোঝানো হয়েছে।
৮. এ দিনটিকে কেন্দ্র করে দেশের গ্রাম অঞ্চলে এমনকি এখন শহরেরও বিভিন্ন স্থানে বৈশাখি মেলা বসে থাকে। যেখানে বাঙ্গালীর ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়ে থাকে।
৯. উক্ত মেলায় নানা ধরনের বাঙ্গালীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র পাওয়া যায়। এছাড়া নাগরদোলা সহ নানা রকম বাহারি মিস্টি পাওয়া যায়।
১০. আমি একজন বাঙালি তাই পহেলা বৈশাখ আমার কাছে একটি প্রাণের উৎসব।
পহেলা বৈশাখ কি
পহেলা বৈশাখ মুলত বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন বা বৈশাখ মাসের ১ তারিখ। সম্রাট আকবর যখন প্রথম বাংলা পঞ্জিকা ব্যবহার শুরু করে ঠিক তখন থেকেই এ দিনটিকে বছরের প্রথম দিন হিসাবে পালন করা হয়ে আসছে। এ দিনটি মুলত বাংলা বছরের শুরু। এ দিনকে কেন্দ্র করে নানা স্থানে নানা আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।পহেলা বৈশাখ কবে উদযাপন করা হয়ে থাকে
আমাদের দেশে অথাৎ বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ ১৪ এপ্রিল ইংরেজি তারিখে পাল করা হয়ে থাকে অপর দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ১৫ এপ্রিল ইংরেজি তারিখে পালন করা হয়ে থাকে।পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু তথ্য
বাংলা বছরের প্রথম দিন হলো পহেলা বৈশাখ। নানা আয়োজনের মাধ্যমে এ দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। দেশের সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ছুটি থাকে এই দিনে। বাঙালির সকল স্থরের মানুষ নানা আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। খাবার দাবার পরিবেশন, ঘুরে বেড়ানো ইত্যাদি আয়োজন রয়েছে এই দিনে।এই দিনে সবাই বৈশাখী পোশাক পরে থাকে। শাড়ী ও পাঞ্জাবি হলো বাঙালির একটি ঐতিহ্যবাহি পোশাক। এবং তারা বিভিন্ন শোভাযাত্রা বা র্যালিতে অংশগ্রহণ করে। কোন এক নিদিষ্ট স্থানে জড়ো হয়ো নানা রকমের বাঙালিকালচার ও গান পরিবেশন করে থাকে এই দিনে।
খাবারের ক্ষেত্রে প্রথমে সকালে পান্থা ইলিশ এর কথা না বললেই নয়। তার পর রয়েছে বিভিন্ন মিষ্টান্ন খাবার ঘোরাঘুরি সহ সত্যি যে কি আনন্দ তা ভাষায় বোঝানো যায়না।
পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে কিছু কবিতা
বারেবারে যথা কাল বৈশাখী ব্যর্থ হলো রে পুব হাওয়ায়
দধীচি হাড়ের বজ্র বহ্নি বারে বারে যথা নিভিয়া যায়,
কে পাগল সেথা যাস হাকি
“বৈশাখ কাল বৈশাখী”
হেথা বৈশাখী-জ্বালা আছে শুধু নাই বৈশাখী ঝড় হেনায়,
সে জ্বালায় শুধু নিজে পুড়ে মরি পড়াতে কারেও পারিনে হায়।
জাগেনি রুদ্র, জাগিয়াছে শুধু অন্ধকারের প্রথম দল,
ললাট অগ্নি নিবেছে শিবের জটার গঙ্গাজল।
জাগেনি শিবানী জাগিয়াছে শিবা,
আধার সৃষ্টি আসেনি ক দিবা।
এরই মাঝে হায়, কালবৈশাখী স্বপ্ন দেখিলে কে তোরা বল
আসে যদি ঝড় আসুক, কুলোর বাতাস কে দিবি অগ্রে চল।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কল্পনা কাব্যের “বৈশাখ” কবিতার বৈশাখ কে সরাসরি সম্বোধন করেছেন এই ভাবেঃ
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ,
ধুলাই ধূসর রুক্ষ উড্ডীন পিঙ্গল জটাজাল,
তপক্লিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষাণ ভয়াল
কারে দাও ডাক
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ।
কবি আক্ষে করে বলেছেনঃ-
কালবৈশাখী আসেনি হেথায়, আসিলে মোদের তরু-শিরে
সিন্দু শকুন বসিত না আসি’ ভিড় করে আজ নদীতিরে।
জানিনা কবে সে আসিবে ঝড়
ধুলাই লুটাবে শত্রু গড়,
আজিও মোদের কাটেনি ক শীত, আসেনি ফাগুন বন ঘিরে,
আজিও বলির কাঁসরঘন্টা বাজিয়া উঠেনি মন্দিরে।
কবি নজরুল বৈশাখের রুক্ষরূপ তুলে ধরেছেন এই ভাবে
হে বৈরাগী, কারো শান্তিপাঠ।
উদার উদাস কন্ঠ যাক ছুটে দক্ষিনে ও বামে
যাক নদী পার হয়ে, যাক টলি গ্রাম হতে গ্রামে,
পূর্ণ করি মাঠ,
হে বৈরাগী, কারো শান্তিপাঠ।
ছাড়ো ডাক, হে রুদ্র বৈশাখ!
ভাঙ্গিয়া মধ্যন্য তন্দ্রা জাগি উঠি বাহিরিব দ্বারে,
চেয়ে রবো প্রাণীশূন্য দগ্ধ তৃণ দিগন্তের পারে
নিস্তব্ধ নির্বাক
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ।
শান্ত ঋষির মত বৈশাখের কাছে কবির আবেদন এভাবে-
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ
তোমার ফুতফারক্ষুদ্ধ ধুলাসম উড়-ক গগনে,
ভরে দিক নিকুঞ্জের স্বলিত ফুলের গন্ধ সনে
আকুল আকাশ
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ।
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।
মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।
রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ।
মায়ার কুজ্বটিজাল যাক দূরে যাক।
জ্বলিতেছে সম্মুখে তোমার
লোলুপ চিতাগ্নিশিখা লেহি লেহি বিরাট অম্বর
নিখিলের পরিত্যক্ত মৃত স্তপ বিগত বসর
করি ভষ্মসার
চিতা জলে সম্মুখে তোমার।
ধ্বংসের নকীব তুমি দুর্বার, দুর্ধর্ষ বৈশাখ
সময়ের বালুচরে তোমার কঠোর কন্ঠে
শুনি আজ অকুন্ঠিত প্রলয়ের ডাক।
এসো তুমি সাড়া দিয়ে বিজয়ী বীরের মতো, এসে স্বর্ণ শ্যেন,
বাজায় নাকাড়া কাড়া এস তুমি দিগি! জয়ী জুলকারনায়েন,
আচ্ছন্ন আকাশ নীলে ওড়ায়ে বিশাল শুক্তিমত্ত ও প্রাবল্যে প্রাণের,
সকল প্রকার বাধা চূর্ণ করি মুক্ত কর পৃথিবীতে সরণি প্রাণের,
সকল দীনতাম ক্লেদ লুপ্ত করে, জড়তার চিহ্ন মুছেয়াক,
বিজয়ী বীরের মতো নির্ভিক সেনানী তুমি
এসো ফিরে হে দৃপ্ত বৈশাখ।
মাঠ-ঘাট বন
পুড়ছে যখন
অগ্নি খরায় তাপে,
পুড়ছে পৃথিবী,
পুড়ছে জীবন
পারমাণবিক পাপে।
যখন মানুষ,
পশু ও পাখির জীবন ওষ্ঠা-গত
তখন বৈশাখ
এল পৃথিবীতে
হাতেম তাই এর মত।
বৈশাখ এসেছে ফুল বৃষ্টিতে
ধুয়ে যাক শোক-তাপ
কালবৈশাখী এনেছে সঙ্গে,
উড়ে যাক যত পাপ
উপসংহার
পহেলা বৈশাখ নিঃসন্ধেয়ে বাঙালি জাতীর প্রাণের উৎসব। এ দিনে সকল বাঙালি জাতি নির্বিশেষে কিশোর-কিশোরী, ছোট বড় সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহনে জেগে উঠে ঢাকার রমনার বটমুল। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা শহর বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি স্থানে গড়ে উঠে নানাবিধ আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।
আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url