রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহ
রমজান মাস ইসলাম ধর্মে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এক বছরে ১২টি মাস তার মধ্যে রমজান মাসকে আল্লাহ তায়ালা এতবেশি সম্মান প্রদান করেছেন যা অন্যান্য মাসের মধ্যে প্রদান করেননি। রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন নাজিলের মাধ্যমে এ মাসের সম্মানকে বৃদ্ধি করেছেন। আর এ কারনে আমরাও যে ইবাদত করে থাকি তা অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে ১ থেকে বৃদ্ধি পেতে পেতে ৭০০ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহ আমাদের অনেকের হয়তো জানা নাই। আমরা শুধু রমজান মাস বলতে রোখা রাখা নামাজ আদায় করা সেহেরি করা ও ইফতার করাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কিন্তু এর বাহিরেও বেশ কিছু আলম রয়েছে যেগুলা পালন করা খুব জরুরী।
ভূমিকা
রমজান মাস এমন একটি মাস যে মানে মহান আল্লাহ তায়ালা এমন একটি গ্রন্থ নাজিল করেছে যেটি আমাদের সঠিক পথ দেখায় ও আল্লাহর ইবাদত করার সঠিক পথপদর্শক হিসাকে আমাদের আমলকে মজবুত করে। রমজান মাসে রোজা রাখা প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরজ করা হয়েছে যেমন করা হয়েছিল আমাদের পূর্বপুরষদের উপর।আরো পড়ুন: গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি সুন্নত
আমরা অধিকআংশ মানুষ রমজান মাসে শুধু মাত্র চারটি আমল করে থাকি আর সেটি হলো রোজা রাখা, ইফতার করা, সেহেরি করা ও রাতে তারাবির নামাজ পড়া। এর মধ্যে আবার অনেক মানুষ রয়েছে যারা তারাবির নামাকেও তেমন পাধান্য দেয়না। শুধু মাত্র রোজা রাখে। অনেক হাদিসে রয়েছে যারা তারাবির নামাজ না পড়ে রোজা রাখে তাদের রোজার হক আদায় হয়না।
আরো পড়ুন: ফরজ গুসল করার নিয়ম
রোজা রাখা আল্লাহ তায়ালা ফরজ হিসাবে ইবাদত বলেছেন কিন্তু তারাবির নামাজ পড়া সুন্নত কিন্তু একে অবহেলা করা মোটেও যাবেনা। এটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কিন্তু আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ আমলটি বাদ দিয়ে বর্তমানে টেলিভিশন, ফেসবুক বা অন্যান্য সোশাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি বিধায় এই এতবড় নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
শেষ ১০ দিনে লাইলাতুল কদর তালাস করা
লাইলাতুল কদর এই রাত্রী রমজান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে রয়েছে। তাই আমাদের শেষ দশ দিনে লাইলাতুল কদর তালাস করতে প্রয়োজন।
লেখকের মন্তব্য: আশা করি এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে দয়া করে অন্যকে উপকৃত হওয়ার জন্য পোস্টটি শেয়ার করুন।
রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহ
চাঁদ দেখা
রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন তোমরা রমজান মাসের চাঁদ দেখে রোজা রাখ এবং ঈদের চাঁদ দেখে ঈদ উৎযাপন করো। কিন্তু আমরা কেউ এখন চাঁদ দেখার চেষ্টা করিনা। রমজান মাসের চাঁদ দেখা সুন্নত। যদি আকাশ মেঘলা বা কোন কারনে চাঁদ দেখা না যায় তাহলেও একটু তালাশ করতে হবে। তাহলেও আপনার আমল নামায় সমপরিমান সোয়াব লিখা হবে।কিন্তু আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ আমলটি বাদ দিয়ে বর্তমানে টেলিভিশন, ফেসবুক বা অন্যান্য সোশাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি বিধায় এই এতবড় নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
রোজা রাখা
রমজান মাসের প্রতিটি রোজা রাখা বাধ্যতামূলক। আমরা যারা সুস্থ, সুস্থ্য জ্ঞানের অধিকারী এবং প্রাপ্ত বয়ষ্ক আমাদের সকলের রমজান মাসের প্রতিটি রোজা রাখা বাধ্যতামুলক। এটি খেলাপ করা কোন অবস্থাতে ঠিক হবেনা। তবে মা-বোনদেন জন্য ঋতু স্রাবের সময় অর্থাৎ মাসিকের সময় তারা রোজা রাখবেন না পরবর্তী মাসে সেই রোজার কাজা আদায় করে নিতে হবে।রাতে তারাবির সালাত আদায় করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা দিনের বেলা রোজা রাখে কিন্তু রাতে তারাবির নামাজ পড়েনা। এই সমস্ত কাজের জন্য রোজা দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক হাদিসে আছে তারাবি বিহিন রোজা হবেনা। তাই আমাদের যতই কষ্ট হোক সারা দিন রোজা রেখে শরীর ক্লান্ত হোক রাতের বেলা তারাবির নামাজ আদায় করতে হবে।সাহারি করা
রমজান মাসের আরেকটি গুরুত্ব ফজিলত হলো রাহারি করা। অনেকে সাহারী না করে রোজা রাখে। এতে সমস্যা নাই রোজা হবে কিন্তু সাহারির যে সোয়াব তা থেকে বঞ্চিত হয়। সাহারীর মধ্যে থাকে অনেক ফজিলত ও বরকত। কারন সাহারীটি রোজা রাখার উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে। তাই রমজান মাসে সাহারী করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।শেষ রাত্রে সাহারী করা
অনেকে আবার গভীর রাত্রে অর্থাৎ রাত্রী ১ টাকা অথবা ২ টার দিকে সেহরী করে আবার ঘুমিয়ে যায়। কিন্তু সবথেকে উত্তম সহয় হলো শেষ রাত্রে সেহরী করা। রাসুলুল্লা (স) শেষ রাত্রে সেহেরী করাকে পাধান্য দিয়েছে। এমন সময় সেহরী করতে হবে যেন সেহরী শেষ হওয়ার পর অল্পকিছুক্ষন কোরআন তেলাওয়াত করা যায়। তাই বলে ফজরের আজান দিচ্ছে এমন সময় নয়।ইফতারী করা
রমজান মাসের সব থেকে আনন্দের সময় হলো ইফতারের সময়। এ সময় রোজাদারদের জন্য বিশেষ একটি মুহুর্ত। ইফতারের মুহুর্ত আল্লাহর কাছে সবথেকে সুন্দর একটি মুহুর্ত। এসময় রোজাদার ব্যক্তি যে দোয়া করবো তা আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।ইফতারীর সময় তারাতারি ইফতার করা
অনেকে দেরিতে ইফতার করে। সূর্য পশ্চিম আকাশে ডুবে যাওয়ার পরেও অনেকে ইফতার করে অনেক দেরিতে যা ঠিক নয়। যখন বুঝবেন সূর্য্য পশ্চিম অস্ত গিয়েছে ঠিক সে সময় ইফতার করা প্রয়োজন।ইফতারের দোয়া পড়া
ইফতার করার সময় অবশ্যই ইফতারের দোয়া পড়তে হবে। কারণ এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়।খেজুর খাওয়া
খেজুর খুব উপকারী একটি ফল। আমাদের প্রিয় রাসুল খেজুর খেতে খুব ভালবাসতে। এটি আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। তাই ইফতারের সময় ও সেহরী করার সময় খেজুর খাওয়া উচিত।বেশি বেশি দোয়া পড়া
রমজান মাসে রোকা রাখা অবস্থায় দিন ভর বেশি বেশি দোয়া পড়া প্রয়োজন। কারণ রোজাদারদের দোয়া আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।পাপ কাজ বর্জন করা
অন্যান্য সময় তো আমরা পাপ কাজ বর্জন করবো। কখনো কখনো আমরা পাপাচার কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েও পড়ি। কিন্তু রোজা রাখা অবস্থায় কোন অবস্থাতেই পাপ কাজের সঙ্গে জড়িত হওয়া যাবেনা। সব সময় পাপ কাজ বর্জণ করতে হবে।মিথ্যা না বলা
মিথ্যা সকল পাপের উৎস। তাই আমাদের মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস দুর করতে হবে। তেমনি রোজা রাখা অবস্থায় কোন অবস্থাতে মিথ্যা কথা বলা যাবে না। রোজা রেখে মিথ্যা কথা বললে রোজা নষ্ট য়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মিথ্যা বাদীকে আল্লাহ পছন্দ করেনা।দন্দ বিবাদ না করা
রোজা অবস্থায় কারো সাথে খারাপ আচারন না করা বা দন্দ বিবাদ না করা। কেউ কোন কথা বলেলে তাথে বলেবে আমি রোজাদার তোমার সাথে দন্দ করতে চাইনা।কল্যানকর কাজ বেশি বেশি করা
রোজা রাখা অবস্থায় বাল ভাল কল্যানকর কাজ বেশি বেশি করতে হবে। অন্য সময় যে কল্যানকর কাজ করলে যতটুকু সোওয়াব দেয়া হয় তা রমজান মাসে করলে ১ থেকে ৭০০ গুন পর্যন্ত বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।ইস্তেগফার করা
রমজান মাস আল্লাহর কাছে গুনা মাফ নেওয়ার সময়। যে এ মাসে তার জীবনের গুনা মাফ করে নিতে না পারে সে ধ্বংস হোক। এমন কথাও পবিত্র হাদিস শরীফে রয়েছে। তাই আমাদের বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে হবে।রোজাদারকে ইফতার করানো
রমজান মাসে রোজাদারকে ইফতার করানো খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সওয়াবের কাজ। পবিত্র হাদিসে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করালো সে একটি কবুল রোজার সওয়াব পেল। তাই বলে এই নয় যে, যে ব্যক্তি ইফতার করলো তার সওয়াব কমে গেল। তাই আমরা চাইলে নিজেদের সার্ধ্য মোতাবেক এই বরকতময় মাসে রোজাদারকে ইফতার করানোর চেষ্টা করবো।কোরআন তেলাওয়াত করা
রমজান মাস রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস। এ মাসের সকল ইবাদতের সেওয়াব অনেক বেশি। আপনি যদি অন্য মাসে কোরআন তেলাওয়াত করেন তার থেকে রমজান মাসে কুরআন তেলাওয়াত করেন তাহলে অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তাই রমজান মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। সম্ভব হলে এই মাকে কোরআন শেষ করতে পারলে অনেক ভাল হয়।কোরআন তেলাওয়াত শোনানো
আপনি কোর আন তেলাওয়াত করতে পারলে অন্যকে কোরআন তেলাওয়াত শুনান। যেমন ধরুন আপনি পড়ুন আপনার স্ত্রী শুনবে আপনার স্ত্রী পড়বে আপনি শুনবেন। এটি খুব ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত।সাদকা করা
অন্যান্য মাসে সাদকা করলে যে সোওয়াব পাওয়া যায় রমজান মাসে সদকা করলে ১-৭০০ গুন পর্যন্ত সওয়াব পাওয়া যায়। আমাদের প্রিয় নবী (স) এই মাসে অধিক পরিমান সাদকা করতেন। আমরাও চেষ্টা করবো রমজান মাসে সাদকা করতে।তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া
আমরা বিভিন্ন ব্যস্ততার কারনে তাহাজুত নামাজ পড়তে পারিনা। অন্যান্য নাজাম পড়ার জন্য যেমন মুয়াজ্জিন আজানের মাধ্যমে আমাদের ডাকে কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য সয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ডাকেন। তাই আমরা সেহেরীর সময় একটু আগে উঠে খুব সহজেই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারি।ওমরা করা
রমজান মাসে ওমরা করাকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই সময় ওমরা করলে একটি কবুল হজ্জের সওয়াব পাওয়া যায়। তাই তাদের সামর্থ আছে এই মাসে ওমরা করার চেষ্টা করবো।দিনের বেলা মেসওয়াক করা
রোজা রেখে দিনের বেলা মেওয়াক করতে আমাদের প্রীয় নবী। তাই আমরা রোজা রেখে দিনের বেলা মেসওয়াক করতে পারি।শেষ ১০ দিনে ইত্তেকাফে থাকা
রমজানের শেষ ১০ দিন ইত্তেকাফ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এই দশদিনের মধ্যে রয়েছে শবে কদর যার হাজার মাসের থেকে উত্তম একটি রাত্রী। ইত্তেকাফ মানে এই নয় যে আপনি কারো সাথে কোন কথা বলতে পারবেন না। আপনার প্রয়োজনে কথা বলতে পারবেন। এটি আল্লাহর কাছে যাওয়ার খুব সহজ একটি মাধ্যম। আর সেই মহিমান্নিত রাত্রি তালাসের জন্য খুব উত্তম পন্থা।শেষ ১০ দিনে বেশি বেশি আলম করা
আমাদের প্রিয় নবী রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে খুব বেশি বেশি আমল করতেন এবং আমার করার কথা বলেছেন। তাই আমাদেরও উচিত এই নাজাতের শেষ ১০ দিনে বেশি বেশি ইবাদত করা।শেষ ১০ দিনে লাইলাতুল কদর তালাস করা
লাইলাতুল কদর এই রাত্রী রমজান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে রয়েছে। তাই আমাদের শেষ দশ দিনে লাইলাতুল কদর তালাস করতে প্রয়োজন।
লাইলাতুল কদরের রাত্রে বেশি বেশি দোয়া পড়া
কেউ যদি লাইলাতুল কদরের রাত্রী পেয়ে থাকেন বা বুঝতে পারেন তাহলে এই রাত্রে বেশি বেশি দোয়া করবেন নিজের জন্য আত্মীয় স্বজনের ও প্রতিবেশীর জন্য। বিশেষ করে যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের জন্য। কারণ রমজান মাসে অনেক জাহান্নামীকে আল্লাহ দোয়ার মাধ্যমে ক্ষমা করে দেন।রমজান মাসে ফিতরা দেওয়া
রমজান মাসের ফিতরা আদায় করা একটি বড় ইবাদত। এর মাধ্যমে আপনার রোজা পরিশুদ্ধ হয়। রোজা রাখা অবস্থায় যদি কোন ভুল করে ফেলেন তাহলে ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দিতে পারেন। আর ফিতরা আদায় করলে আপনার মহল্লায় থাকা গরিব মানুষগুলো ঈদের দিনে একটু ভাল খাবার খেতে পারে এবং নতুন পোশাক ক্রয় করতে পারে। তাই রমজানের শেষ ইবাদত হলো ফিতরা আদায় করা।উপসংহার
রমজান মাস রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ মাসের ইবাদত আল্লাহর কাছে খুব পছন্দনিয়। আর রমজান মাসের রোজা রাখার কতটুকু সওয়াব তা আল্লাহ তায়ালা প্রকাশ করেনি। আল্লাহ তায়ালা বলেন রোজা একমাত্র আমার জন্য আর আমি নিজ হাতে এর সওয়াব দিবো। তাহলে বুঝতে পারছেন রোজার সওয়াব কত বড় হতে পারে যা সয়ং সৃষ্টিকর্তা আমাদের নিজে দিবেন।লেখকের মন্তব্য: আশা করি এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে দয়া করে অন্যকে উপকৃত হওয়ার জন্য পোস্টটি শেয়ার করুন।
আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url