পান চাষের পদ্ধতি - পানের বিভিন্ন রোগ সনাক্ত

পানে যেমন রয়েছে উপকার তেমনি এটি একটি ভেষজ উপাদান। পান আমাদের দেশে বানিজ্যিক আকারে চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। কিন্তু কৃষকগন সঠিক পদ্ধতি পান চাষ করতে না জানার কারনে এর উৎপাদন অনেক কম হয়। এ পোস্টের মাধ্যমে পান চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
পান চাষের পদ্ধতি - পানের বিভিন্ন রোগ সনাক্ত

আমাদের দেশের কৃষকগন পান চাষের সঠিক নিয়ম না জানায় ও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে অবগত না থাকার কারনে আশানারুফ ফলন হয়না। এতে করে কৃষকগণ অনেক ক্ষতির সম্মুর্খিত হচ্ছে প্রতিবছর।

ভূমিকা

পান একটি অর্থকরী ফসল। এছাড়াও পান একটি ভেষজ গুণে পরিপূর্ণ। পান খায়না বা কেউ কোনদিন পান খাইনি এমন মানুষ খুজে পাওয়া খুব কষ্টকর। যে একবার পানের স্বাদ পেয়েছে সে পান ছাড়া থাকতেই পারেনা।

পান চাষের পদ্ধতি

মাটি তৈরি: পান চাষের জন্য দরকার উঁচু সমতল ভূমি, বন্যামুক্ত, বেলে দোআঁশ বা এটেল দোআঁশযুক্ত জমি। এছাড়াও জমিটি হতে হবে ছায়াযুক্ত এবং নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পান চাষের জন্য খুব উপযোগী।

জমি তৈরি

জমিকে আগাছামুক্ত, সমতল ও উঁচু করে তৈরি করে প্রতি ৬০ সে.মি পর পর ২০ সে.মি চওড়া করে নালা তৈরি করে নিতে হয়। বরোজের বাইরে একটি বড় নিকাশ নালার সাথে ছোট নালাগুলোকে যুক্ত করে দিতে হয়। জমি তৈরির সময় শেষ চাষের পর মাটিতে একর প্রতি ২০০ কেজি তিলের খৈল বা নিম তৈল, ৪০ কেজি টিএসপি ও ৬০ কেজি এমওপি সার মিশিয়ে দেয়া দরকার। দু’নালার মাঝখানের ভিটিতে চারা রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের আগে ৪০% ফরমালিন বা ১% বোঁর্দো মিশ্রণ দিযে মাটি মোধন করে নিলে গোড়া পচা রোগসহ মাটিবাহিত অন্যান্য রোগ হওয়ার আশংকা কম থাকে।

বরোজ তৈরি

পান গাছকে ছায়া দেয়া ও প্রবল বাতাসের হাত থেকে রড়্গা করার জন্য উন্নতমানের বরোজ তৈরি করা একান্ত জরুরি। বরোজ তৈরিতে পাকা বাঁশ/খুঁটি, বাঁশের চটা, ছন বা কাশ জাতীয় ঘাস, খড় এসবের দরকার হয়। বরোজ তৈরির জন্য প্রথমে ২.৫-৩.০ মিটার লম্বা পাকা বাঁশের খুঁটি তৈরি করে গোড়ায় আলকাতরার প্রলেপ দিতে হবে।
 
এতে বরোজে উঁইয়ের আক্রমণ হবে না। খুঁটি চারিদিকে পোঁতার পর তাতে বাঁশের চটা, ছন/খড় দিয়ে ছাউনি ও শুকনা কলাপাতা, খেজুর পাতা, সুপাড়ি পাতা এসব দিয়ে বেষ্টনী বা বেড়া দেয়া হয়। ভেতরে চারা রোপনের পর প্রয়োজনমত কাঠি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়।

চারা রোপণ:

বরোজের ভেতরে চারিদিকে ৬০ সে.মি চওঢ়া রাসত্মা রাখতে হয়। প্রতিটি বেড ১২০ সে.মি চওড়া করে তৈরি করে নেয়া দরকার। প্রতিটি বেডে দুই লাইনে চারা রোপণ করতে হয়। একটি লাইন থেকে আরেকটি লাইনের দূরত্ব ৩০ সে.মি রাখতে হয়। আবার প্রতি দুই বেডের মাঝখানে ৩০ সে.মি নালা রাখা দরকার।
 
সাধারণত বর্ষাকাল বা আষাঢ় মাস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। কাটিং সামান্য কাৎ করে (৪৫ ডিগ্রী) অর্ধেক অংশ মাটির ভেতর এবং বাকি অংশ চোখ বা মুকুল মাটির ওপর রাখা হয়। দ্বিসারি পদ্ধতিতে ৫-১৫ সে.মি লম্বা কাটিং লাগে শতক প্রতি ৪০০-৫০০ টি।

রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা

কাটিং থেকে অনেক সময় অনেকগুলো চারা জন্মে, সেড়্গেত্রে অপ্রয়োজনীয় চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। লতা বাড়তে বাড়তে বরোজের ছাউনি বা ছাদে ঠেকে গেলে নীচের দিকের পাতা তুলে রতাটি নামিয়ে দিতে হয়। এতে পান পাতার আকার স্বাভাবিক থাকে এবং ফলনও বেশি পাওয়া যায়। বছরে ৩/৪ বার গোড়ার মাটি তুলে দেয়া দরকার।

সার প্রয়োগ

জমিতে জৈব সারের পাশাপশি সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে ফলন পাওয়া যায়। প্রতি শতক জমির জন্য খৈল ২০ কেজি, ২.৫ কেজি এসএসপি, ৬০০ গ্রাম এমওপি এবং ১.৮ কেজি ইউরিয়া সার সমান চার ভাগ করে বছরে ৪ বার জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। বর্ষাকালে দু’দফায়, শরৎকালে ১ বার ও বসনত্মকালে ১ বার দিতে হয়।

সেচ ব্যবস্থাপনা

পরিমিত পানি সেচ দিতে হবে এবং বেশি পানি তাকলে তা বের করে দিতে হবে। চারা রোপণের পর ঝাঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।

পাতা তোলা

বর্ষাকালে চারা রোপণ করা হলে ৫-৬ মাস পর থেকেই পাতা তোলা শুরু করা যায়। নচিন দিকের পাতা আগে তুলতে হয়। এতটি পাতা সম্পূর্ণভাবে পরিণত হতে ৬-৮ সপ্তাহ সময় দরকার হয়। কচি পাতার চেয়ে বয়স্ক অথচ সবুজ-এমন পাতার চাহিদাই বেশি।

রোগবালাই

আমরা যারা পান চাষ করবো বা পান চাষ করে থাকি তাহলে আমরা যদি পানের বিভিন্ন রোগ সনাক্ত করতে না পানি বা বিভিন্ন রোগের জন্য তার প্রতিকার সম্পর্কে না জেনে থাকি তাহলে আমরা আমাদের কাঙ্খিত ফলন উৎপাদন করতে পারবোনা। সেই জন্য আমাদের প্রথমে পানের বিভিন্ন রোগ সনাক্ত ও তা দমন সম্পর্কে ধারনা থাকা খুব জরুরী।

গোড়া পঁচা 

পানের গোড়া পঁচা রোগ হলে পান থেকে আশানারুপ ফলন পাওয়া সম্ভব নয়। এর ফলে পানগাছ দূর্বল হয়ে পড়ে এবং পান গাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গোড়া পঁচা এটি এক ধরণের ছত্রাকের আক্রমণের কারনে হয়ে থাকে। বোঁর্দে মিশ্রণ দিযে মাটি শোধন করলে রোগের আক্রমণ কম হয়। আক্রমণ বেশি হলে ডায়থেন এম-৪৫ বা রিডোমিল এম জেড-৭২ ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।

পাতায় দাগ পড়া

পানের পাতায় দাগ পড়লে সেই পান বাজারে তেমন কোন চাহিদা থাকেনা। এতে করে পান চাষী মারাক্তক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। এটি এক ধরণের ছত্রাকের আক্রমণের কারনে হয়ে থাকে। আক্রান- পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হয়। আক্রমণ বেশি হলে কুপ্রাভিট বা বাভিস্টিন জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়।

পাতা পঁচা

পানের পাতা পঁচলে কৃষের কষ্ট বৃথা হয়ে যায়। পাতা পঁচলে গাছের বৃদ্ধি ও বিকাশ মারাক্তক হুমকির মধ্যে পড়ে। এটি এক ধরণের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারনে হয়। বরোজ সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাকা দরকার। আক্রমণ শুরু হওযা মাত্রই লতা ও মাটিতে বোঁর্দে মিশ্রণ স্পে করতে হয়।

উপসংহার

পান একটি অর্থকরী ফসল। এটি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও খুব সুনাম অর্জন করেছে। বাংলাদেশের পান বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চলের পান এর সুনাম অপরিসীম। 

লেখকের মন্তব্য: পান চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি, সেচ ব্যবস্থা থাকতে হবে। পান চাষের জন্য ও অধিক ফলনের জন্য আপনি কৃষি অফিসারের পরামর্শ নিতে পারেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url