ডিপ্রেশনের কারণ - ডিপ্রেশন দূর করার উপায়

ডিপ্রেশন বর্তমান মানব সভ্যতায় এক বিশেষ প্রভাব ফেলেছে। আমাদের দৈনন্দিন কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে চলে থাকি। ডিপ্রেশন বিভিন্ন কারনে হতে পারে। ডিপ্রেশনের কারনে শারীরিক ও মানষিক বিকাশের উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলে থাকে। তাই এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন এ ডিপ্রেশনের কারণ সম্পর্কে।
 
ডিপ্রেশনের কারণ -  ডিপ্রেশন দূর করার উপায়

ডিপ্রেশন দুর করার আমাদের জন্য খুব জরুরী। কারণ ডিপ্রেশন দূর করতে না পারলে কর্মজীবন বা স্বাভাবিক দৈনন্দিন কর্মজীবনে মারাক্ত হুমকির প্রভাব পড়ে। তাই ডিপ্রেশন দূর করার উপায় আমাদের সকলের জানা দরকার।

ভূমিকা

ডিপ্রেশান বর্তমানে আমাদের সকল বয়সের নর-নারী সকলের মাঝেই থাকে। কিন্তু গবেষনায় পুরুষদের থেকে মেয়েদের ডিপ্রেশানের প্রভাব বা ডিপ্রেশানে বেশি ভুগতে দেখা গেছে। 
 
আরো পড়ুন: মন ভাল করার উপায়

ডিপ্রেশনের কারণ

একজন মানুষ বিভিন্ন কারনে ডিপ্রেশনে ভুগে থাকে। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণগুলো নিচে নিচে আলোচনা করা হলো

হরমন পরিবর্তন

মানুষের হরমন পরিবর্তনের কারেন ডিপ্রেশন হওয়া স্বাভাবিক। ডিপ্রেশন বৃদ্ধির ব্যপারে হরমন পরিবর্তন কে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দায়ি করেছে অনেক ক্ষেত্রে। আর এ ধরনের প্রভাব বিশেষ করে মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে।

মস্তিষ্কের রসায়ন

মস্তিষ্কের রসায়ন জনিত সমস্যা ডিপ্রেশন বাড়ার কারণ হয়ে থাকে।

ব্যথা ও পীড়া

কারো শরীরের কোন স্থানে দীর্ঘদিন কোন ব্যথা ও পীড়ায় ভুগতে থাকলে সেই ব্যথা ও পীড়াও ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে।

পারিবারিক ইতিহাস

ডিপেশান বাড়ার কারণ হতে পারে পারিবারিক কোন খারাপ ইতিহাস। অতীতে কারো পারিবারিক কোন খাপার ইতিহাস ঘটে থাকলে পরবর্তী জেনারেশনের মাঝেও সেই ইতিহাসটি ডিপ্রেশান বাড়ার কারণ হতে পারে।

মাদক সেবন

ডিপ্রেশন বাড়ার জন্য মাদক সেবন উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখে। কোন ব্যক্তি যদি মাদকে অধিক আসক্ত হয়ে পড়ে এবং সে মাদক সেবন করতে না পারে তাহলে তার ডিপ্রেশান বৃদ্ধি পাওয়া খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়।

শৈশবের ইতিহাস

কোন ব্যক্তির শৈশবে কোন কিছু ঘটে যাওয়া বা এমন কোন কাজ করে ফেলেছে যেটি কাওকে বলতে পারেনা বা বললে সে অপমানের স্বীকার হতে পারে। কিংবা ভয় পেয়ে থাকে এই ধরনের ইতিহাস ডিপ্রেশন বাড়ার কারণ হতে পারে।

নিরাপত্তাহীনতা বা একাকিত্ব

কোন ব্যক্তি নিরাপত্তাহীনতা বা একাকিত্বয় ভুগলে যেমন কোন সঙ্গি বা বন্ধু নাই যার সাথে সে তার কথা শেয়ার করতে পারে বা গল্প করতে পারে। ডিপ্রেশন বাড়ার কারণ এটিও হতে পারে।

অপমান বোধ

যখন কারো সাথে খারাপ আচারণ করা হয় বা তাকে যখন তখন অপমান অপদস্থ করা হয় সেটিও ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে। যেমন ধরুন কর্মক্ষেত্রে কারো কাজ নিয়ে বা কাজ খারাপ হয়ে থাকলে তালে সকলের মাঝে অপমান করা হয় সেক্ষেত্রে এটিও ডিপ্রেশনের জন্য খুব বড় ভুমিকা পালন করে।

বংশগত প্রভাব

ডিপ্রেশন বাড়ার জন্য বংশগত প্রভাব অনেকক্ষেত্রে দায়ী থাকে। কোন পরিবারের পূর্বের ব্যক্তিগণ যদি বিভিন্ন ডিপ্রেশনের মধ্যে থাকে তাহলেও তার পরবর্তীতে যারা জন্মগ্রহণ করবে তারাও অনেক সময় ডিপ্রেশনের মধ্যে জীবন কাটাতে পারে।

শারীরিক অসুস্থতা

শারীরিক ভাবে যে সুস্থ নাই তার ডিপ্রেশনের অভাব নাই। আজ এই অসুখ, কাল সেই অসুখ এতে করে কেউ কি সুখি জীবন কাটাতে পারে। তাই শারীরিক অসুস্থতা ডিপ্রেশনের জন্য খুব বড় প্রভাব ফেলে।

জীবন পদ্ধতিতে পরিবর্তন

কারো জীবন পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকলে ডিপ্রেশনের বাড়ে। ধরুন কারো জীবনে ব্যবসায়ীক লস বা চাকুরী চলে যাওয়া জীবন পদ্ধতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন বয়ে আনে। এতে করে ডিপ্রেশন বৃদ্ধি পায়।

লিঙ্গ

এক গবেষনায় দেখা গেছে লিঙ্গ ভেদে ডিপ্রেশনের হার নির্ণয় করতে যেয়ে দেখা গেছে মেয়েরা পুরুষদের চেয়ে অনেকবেশি ডিপ্রেশনে থাকে।

আর্থসামাজিক অবস্থা

ডিপ্রেশনের জন্য আর্থসামাজিক অবস্থা অনেক বেশি দায়ী। কোন ব্যক্তি কোন কিছু পাওয়ার আশা করে থাকে বা কোন কিছু আশা করে কিন্তু সেটি আর্থ সামাজিক অবস্থার কারণে সেটি পুরণ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়না। তাই ডার ডিপ্রেশন বৃদ্ধি পেতে পারে।

কর্মক্ষেত্রে প্রভাব

ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে কর্মক্ষেত্রের প্রভাবও। কারণ হিসাবে ধরা যায় কর্মক্ষেত্রে যদি অধিক কাজের চাপ থাকে যা তার একার পক্ষের করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে যে কারনেও ডিপ্রেশন সৃষ্টি হতে পারে।

ঔষধ সেবন

দীর্ঘদিন যাবত কোন ঔষধ সেবনের ফলেও ডিপ্রেশন হয়। কারণ ঔষধের সাইডিফেক ডিপ্রেশন বাড়ানের জন্য কারণ হতে পারে।

মৃত্যু

কারো প্রিজনের মৃত্যুতে ডিপ্রেশন বাড়তে পারে। প্রিয়জনের মৃত্যু খুব খারাপ ডিপ্রেশনের সৃষ্টি করতে পারে। এমনও দেখা গেছে সন্তান বা কোন প্রিয় মানুষের মৃত্যুর ফলে ডিপ্রেশন বৃদ্ধি পেতে পেতে এক সময় ডিপ্রেশনধারী মৃত্যুর কলে ঢলে পড়ে।

উচ্ছাকাংক্ষা

অধিক পাওয়ার আশা ডিপ্রেশনের কারন হতে পারে। কারো যে পরিমান ইনকাম সে পরিমান যদি ব্যয় করে তাহলে ঠিক আছে। আর যদি এর থেকে বেশি পরিমান পাওয়ার আশা করে তাহলেও সেটি ডিপ্রেশন বয়ে আনে। ধরুন একজনের বাই সাকেল ক্রয় করার সামর্থ্য রয়েছে সে যদি মটর সাইকেল ক্রয় করার চিন্তা করে সেক্ষেত্রে এটি তার ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে।

ভিটামিন ডি এর অভাব

অনেক সময় ডিপ্রেশানের কারণ হিসাবে ভিটামিন ডি প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।

অসুখি বিবাহিত জীবন

অনেক পরিবারে ডিপ্রেশনের কারণ হিসাবে লক্ষ্য করা গেছে অসুখি বিবাহিত জীবন। বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে বনিবনা না হওয়ার কারণে তাদের সংসারে সারাক্ষন দন্দ বেধে থাকে। যা ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে।
 
আরো পড়ুন: নারীর মন পাওয়ার সহজ উপায়

ডিপ্রেশন দুর করার উপায়

ব্যয়াম করা

ডিপ্রেশন দুর করতে চাইলে নিয়মিত শারীরিক ব্যয়াম করতে হবে। যা ডিপ্রেশন দুর করতে অনেকটা সহায়তা করে।

মাদককে না বলা

ডিপ্রেশন দুর করার জন্য মাদক দ্রব্য থেকে দুরে থাকতে হবে। তাহলে ডিপ্রেশণ দুর করা সম্ভব।

সীমা নির্ধারণ করতে শেখা

কোন কিছু পাওয়ার বা নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজের সীমা নির্ধারণ করতে শেখা অতিব জরুরী। নিজের প্রতি নিজের সীমা নির্ধারণ করতে পারলে ডিপ্রেশন দুরে থাকে।

ধুমপান না করা

ডিপ্রেশন দুর করতে ধুমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা

আমরা দিন দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ছি। আর এর কারনে আমরা বিভিন্ন কিছু দেখে তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছি। যার ফলে আমাদের ডিপ্রেশন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে।

মানসিক চাপ কমানো

নিজেকে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখা খুব জরুরী। আপনি যা কিছু করবেন তা যেন নিজের ক্ষমতার মধ্যে থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হতে। যদি এর বেশি হয়ে যায় তাহলে মানসিক চাপ বাড়বে এতে করে ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হয়।

ঔষধের পাশ্বপতিক্রিয়া

অনেক সময় ঔষধের পাশ্বপতিক্রিয়া থেকে ডিপ্রেশন হয়ে থাকে। তাই আমরা যে ঔষধ সেবন করবো তার পাশ্ব পতিক্রিয়া জেনে খেতে পারলে ভাল হবে।

নিজের যত্ন নেওয়া

সবার আগে নিজের যত্ন নিতে হবে। নিজের শরীরের ও মনের উপর যত্ন নিলে নিজেকে অনেক হালকা রাখা যায় এতে করে ডিপ্রেশনের মাত্রা কমে যায়।

রুটিন মাফিক চলা

ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিজেকে ও নিজের সকল কাজকে একটি রুটিনের মধ্যে আনতে হবে। এবং রুটিন মাফিক কাজ সম্পাদন করতে পারলে ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হবে না।

লক্ষ্য নিজে কাজ করা

কাজকে ভালবাসতে হবে। আপনি একটি লক্ষ্যের মধ্যে নিজের কাজগুলোকে সাজাতে পারলে সকল কাজ সমাধান করা আপনার জন্য সহজ হবে এবং ডিপ্রেশন কমে যাবে।

সুষম খাদ্যগ্রহণ

সকল কিছুর মুল শরীর সুস্থ রাখা। শরীর সুস্থ তো সবকিছু ভাল লাগবে। আর শরীর সুস্থ রাখতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা খুব জরুরী।

প্রয়োজনীয় ঘুমানো

ঘুম কম হলে ডিপ্রেশন বাড়ে। তাই পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমানো খুব জরুরী।

ইতিবাচক চিন্তা করা

কেউ যদি নেতিবাচক চিন্তা করে তাহলে তার ডিপ্রেশন বৃদ্ধি পায়। তাই সব সময় ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে হবে।

আনন্দনায়ক কাজের মধ্যে থাকা

সব সময় নিজের কাজকে ভাল বাসতে হবে। আর কাজের মধ্যে থাকে আনন্দ। কার কোন কাজ নাই তার কোন আনন্দ নাই। যে সফল ভাবে তার কাজগুলো করতে পারে তার আনন্দ থাকে। তাই কাজকে ভালবেসে চললে ডিপ্রেশন কম হয়।

ডিপ্রেশানের লক্ষ্যন

আমরা সকলে ডিপ্রেশন এর মধ্যে থকি। কিন্তু আমরা কিভাবে বুঝবো আমরা ডিপ্রেশনের মধ্যে রয়েছি। আসুন জানা যাক।

কাজের প্রতি অনীহা

যখন বুঝবেন আপনার কোন কাজে মন বসেনা বা কাজ করতে ভাল লাগেনা তাহলে বুঝবেন আপনি ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে চলছেন।

খাদ্যাভাস পরিবর্তন

যখন কেউ তার খাদ্যভাস পরিবর্তন কোন খাবার ভাললাগেনা খেতে ভাললাগেনা ইত্যাদি এ ধরনের সমস্যার মধ্যে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে ডিপ্রেশনের মধ্যে রয়েছে।

অনিদ্রা

কেউ যদি দীর্ঘকালীন অনিদ্রা জনিত সমস্যায় থাকে তাহলে তার শরীর খারাপ হতে পারে বা ডিপ্রেশনের মধ্যে থাকার প্রবনতা অনেক বেড়ে যায়।

নিজের মধ্যে গুটিয়ে যাওয়া

কেউ যদি কারো সাথে না মিশে, কথা কম বলে বা নিজে একা একা থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে ডিপ্রেশনের মধ্যে রয়েছে।

মনোযোগের অভাব

কেউ যদি কোন কাজে মন না দিয়ে কাজ করে বা কোন কাজ করার সময় মনোযোগ হারিয়ে ফেলে তাহলে সে ডিপ্রেশনের মধ্যে রয়েছে।

নেতিবাচক চিন্তাভাবনা বেশি হওয়া

সকল কিছুতে নেতিবাচক চিন্তাধারা করা। সে তার দ্বারা কোন কাজ করা সম্ভব নয় ইত্যাদি চিন্তা ভাবনা করা ডিপ্রেশনের লক্ষন।

মাথাব্যাথা ও গ্যাস্টিকের সমস্যা

কারো যদি এ ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে এটিও ডিপেশনের লক্ষ্যন হতে পারে।

উপসংহার

ডিপ্রেশন বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে। তাই আমাদের নিজের খেয়াল রাখা দরকার। কারন ডিপ্রেশনের কারনে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। কোন কাজে সফলতা অর্জন করতে পারিনা। তাই আমাদের এই ডিপ্রেশণ থেকে মুক্ত থেকে জীবন যাপন করা জরুরী।

লেখকের মন্তব্য: ডিপ্রেশন খুব খারাপ একটি অভ্যাব। আমাকের সব সময় আনন্দ জীবন যাপন করতে হবে। তাই প্রিয় পাঠক আপনি যদি এ পোস্টের মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অন্যকে উপকৃত হওয়ার জন্য এই পোস্টটি শেয়ার করুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url