আলকুশি বীজ খাওয়ার উপকারিতা - আলকুশি বীজ পাউডার করার নিয়ম
বর্তমানে মানুষ ডিপ্রেশান, কর্মব্যস্ততা, অনিয়মিত চলাফেরা, খাওয়ায় ভেজাল ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত অবস্থায় রয়েছে। আর সেজন্য দিন দিন মানুষের কামশক্তি কমে যাচ্ছে। এতে করে সংসারে দেখা দিচ্ছে অনেক সমস্যা এমন সংসার বিচ্ছেদের মত ঘটনাও ঘটে থাকে। তাই প্রাকৃতিক নিয়মে কিভাবে আলকুশি বীজ খাওয়া উপকারিতা পাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আলকুশি বীজ প্রাকৃতিক নিয়মে যৌনশক্তি বৃদ্ধির এক অমূল্য উপাদান। প্রাকৃতিক কাল থেকেই এই আলকুশি বীজ যৌন সমস্যা সমাঝানের একটি ভেষজ ঔষধ হিসাবে বহুল ক্ষত। এ আলকুশি বীজ পাউডার করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পুরো পোস্টটি গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
এমন কোন রোগ নাই যে রোগের সমাধান মহান সৃষ্টিকর্তা প্রকৃতির মাঝে রাখেনি। কিন্তু আমাদের তেমন কোন ধারনা না থাকার কারনে এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে কোন ধারনা নাই। সকল উপদানের মধ্যে আলকুশি বীজ এক অন্যতম উপাদান। আলকুশি মুলত পাহাড়, জঙ্গল এ জন্মে থাকে। বর্তমানে এ আলকুশি বীজ বানিজ্যিক আকারে চাষ করা হয়ে থাকে।আলকুশি বীজ চিনার উপায়
আলকুশি বীজ মুলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি দেশি প্রজাতীর এবং হাইব্রিড প্রজাতীর। দেশী প্রজাতীর বীজগুলো দেখতে টানটান এবং হালকা বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে এবং ছাইজে দানাগুলো ছোট ছোট। অপরপক্ষে হাইব্রিড প্রজাতীর বীজগুলো কালো বর্ণের হয়ে থাকে এবং সাইজে একটু বড় বড় হয়ে থাকে। তবে গুণাগুনের তেমন খুব বেশি পার্থক্য নেই।আরো পড়ুন: তালমাখনা কি তালমাখনার উপকারিতা
উৎপাদনের ভিত্তিতে দেশি প্রজাতীর আলকুশি বীজ একটু কম পরিমান উৎপাদনহয় কারণ এটি অযত্নে প্রাকৃতিক উপায়ে বৃদ্ধি পায় এ জন্য এর ফলন একটু কম হয় বিধায় এর দাম তুলনামুলকভাবে একটু বেশি। অপর পক্ষে যেগুলো হাইব্রিড এগুলো খুব যত্ন সহকারে চাষাবাদ করা হয় বলে এর উৎপাদন একটু বেশি হয় বিধায় এর দাম তুলনা মুলক কম।
আলকুশি বীজ খাওয়ার উপকারিতা
আলকুশি বীজ পাউডার করার নিয়ম
প্রথমে আলকুশি বীজগুলো খুব ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এর পর আপনি তা দুধে ভিজিয়ে রাখতে পারেন (১ কেজি আলকুশি বীজে ৩ কেজি দুধ) পরিমান মত দুধ দিয়ে ভিজিয়ে তা রোদে কটকটে ভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। এর পর তা বিলিন্ডারে খুব ভাল করে পাউডার করে নিতে হবে।যৌন দুর্বলতায় আলকুশি বীজ
আমরা সাধারণত সহবাজের সময় দ্রুত বীর্যপাতকে যৌন সমস্যা হিসাবে ধরে নিয়ে থাকি। আসলে কি তাই, না এটাই শুধু যৌন সমস্যা নয়। যৌনসমস্যা মধ্যে সহবাসের সময় বির্যপাতের আগে একধরনের সাদা পিচ্ছিল পদার্থ বের হওয়া, প্রসাবের পর সাদা সাদা পিচ্ছিল পদার্থ পড়া ইত্যাদি সকলকিছুই হলো যৌন সমস্যার মধ্যে পড়ে।আলকুশি বীজ খাওয়ার উপকারিতা
আরো পড়ুন: কোলাজেন বৃদ্ধির উপায়
১। আলকুশি পুরুষের যৌনাঙ্গের দুর্বলতা দূর করতে বেশ কার্যকরী। এটি নিয়মিত সেবনের ফলে দ্রুত বীর্যপাত, লিঙ্গ শৈথিল্য, ধাতু দৌবল্য ও ক্ষীনবল হয়ে যাওয়া সহ ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুকি মেলে।
২। আলকুশি দ্রুত ক্ষ সারাতে কার্যকরী। জীবজন্তুর গাছে আঘাত থাকলে বা ক্ষত থাকলে এতে আলকুশির শিকড়ের রস বা বীজ গুড়া দিলে দ্রুত ক্ষত স্থান ভাল হয়ে যাবে।
৩। কোন পোকামাকড়ের কামড়ে বা বিছের দংশনে আলকুশি বীজের গুড়া লাগালে অনেকাংশ যন্ত্রণা কমে যায়। এছাড়া এর বীজ চিনি ও দুধসহ সেদ্ধ করে খেলে বাত রোগের উপশম হয়।
৪। গবেষনায় দেখা গেছ, নিয়মিত আলকুশি বীজের গুঁড়া এক গ্লাস পরিমাণ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে শারীরিক শক্তি বাড়ে ও ক্লান্তি দূর হয়।
৫। আলকুশি গাছের শিকড়ের রস বা বীজ গুঁড়া জ্বর, সর্দি-কাশি ভাল করতে ব্যাপক কাজে লাগে।
৬। ব্যথা পেলে বা মাসিক ঋতুস্রাবে অনেকেরই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আলকুশি শিকড়ের রস বা বীজ গুঁড়া ক্ষতস্থানে লাগালে রক্তপাত দ্রুত বন্ধ হয়। মাসিকের ক্ষেত্রে আলকুশি বীজ গুঁড়া গরম পানি বা দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে রক্তক্ষরণ কমে। পাশাপাশি শরীরের শক্তিও পুনরুদ্ধা হয়।
৭। আলকুশি বীজ গুড়া মধুসহ খেলে কলেরা বা অনুরুপ মারাত্মক পেট খারাপ জনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৮। আলকুশি বীজ শরীরের বীর্য গাড় করতে সাহায্য করে, বীর্যের পরিমান বৃদ্ধি করে এবং বীর্যকে শক্তিশালী করে।
এছাড়াও হঠাৎ হাত-পা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঝিনঝিন করা, অবস হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার সমাধান মেলে নিয়মিত আলকুশি বীজ গুঁড়া খেলে।
আলকুশি পাউডার খাওয়ার নিয়ম
- ১-২ চা চামচ আলকুশি বীজ গুঁড়া গরম পানি বা দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে খেয়ে নিতে পারেন। চাইলে এর সাথে এক চামচ মধুও মিশিয়ে নিয়ে খেতে পারেন।
- দুধ জাল দিয়ে দুধের ঘনত্ব বাড়িয়ে নিতে হবে এবং এই দুধের সাথে ২ চা চামচ আলকুশি পাউডার মিশিয়ে খেতে হবে।
- মধুর সাথেও আলকুশি বীজের গুড়া খাওয়া যায়। যদি কারো গ্যাসটিকের সমস্যা থাকে তাহলে দুধের সাথে না খেয়ে মথুর সাথে আলকুশি পাউডার খেতে হবে।
- যদি কারো পক্ষে দুধ বা মধু সংগ্রহ করা সম্ভব না হয় তাহলে সে গরম পানির সাথেও আলকুশি পাউডার মিশিয়ে খেতে পারে।
- আলকুশি বীজ ২৫০ গ্রাম, তালমাখনা ২৫০ গ্রাম, মধু ১০০-২০০ গ্রাম, কালোজিরা পাউডার ১-২ চামচ এবং আখের মিঠা একসঙ্গে ভাল ভাবে মিশিয়ে হালুয়া তৈরি করে যদি সকাল এবং সন্ধ্যা ১ চামচ করে ৬-১২ সপ্তাহ খেতে পারেন।
পরিশেষে, আলকুশি বীঝ গুাঁড়া মুলত পুরুষের যৌনাঙ্গের দূর্বলতা রোধ করে এর কর্মক্ষমতা বাড়াতে অধিক কার্যকরী। তাই যাদের এসকল সমস্যা রয়েছে তারা নিশ্চিন্তে এই ভেষজ গুণাগুন সম্পন্ন উদ্ভিদে ভরসা রাখতে পারেন।
নিয়মিত সেবনে খুব দ্রুতই প্রাকৃতিক ভাবে এসকল সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মিলবে।
এছাড়াও আপনি সোলা বুট এর সাথে ২ চামচ আলকুশি পাউডার খেয়ে নিতে পারেন। তাহলে বুঝতে পারবেন না এর সেই তিতা স্বাদ।
আরো পড়ুন: পেঁপেঁ পাতার ঔষধি গুন
তবে মনে রাখতে হবে যাদের যৌন সমস্যা একটু বেশি থাকে তারা দুধ বা মধুর সাথে টানা ৯০ দিন খাবে এবং যাদের কম পরিমান সমস্যা রয়েছে তারা ৪৫ দিন খেলেই হবে।
আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url