কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

প্রিয় পাঠক আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে কিসমিসের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা সকলে জানি কিমসিম কি এবং কিভাবে তৈরি করা হয়। কিসমিস মুলত আঙ্গুর থেকে হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা কিসমিক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে তেমন জানেন না।
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

তাই আসুন আম আমরা কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা, কিসমিক খেলে কি হয় এটা শরীরের জন্য কতটুকু ভালো ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিই।

ভূমিকা

কিমমিস মুলত আঙ্গুর থকে হয়ে থাকে। প্রথমে আঙ্গুরকে ২০-২৫ দিনে শুকিয়ে কিসমিসে রুপান্তর করা হয়। আমরা অনেকে বিভিন্ন ভাবে কিসমিস খেয়ে থাকি। আমরা সাধারণত কিসমিস পায়েস বা পোলাও এর সাথে বেশি রান্না করে খেয়ে থাকি। কিন্তু আপনি যদি প্রতিদিন নিয়ম মেনে কিসমিস খেয়ে থাকেন তাহলে এর গুনাগুন সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। কিসমিস মুলত মিষ্টি জাতীয় একটি খাবার। কিসমিস কে শুননো ফলের রাজা বলা হয়ে থাকে। এবার আসুন কিসমিস সম্পর্কে জেনে নওয়া যাক।

আরো পড়ুন: গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি সুন্নত

কিসমিস কি

কিসমিস এক ধরনের ফল। দেখতে হালকা মাদামী বর্ণের হয়ে থাকে। আঙ্গুর সাধারণত ৩ সপ্তাহ রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় কিসমিস। এটি এমনি খাওয়া যায় এমনকি অনেকে সময় রান্নার সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
 
এবার আসুন প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে কি কি উপাদান রয়েছে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ক্রমিক নং

উপাদানের নাম

উপাদানের পরিমান

০১

ক্যালোরি

২৯৯ 

০২

প্রোটিন

৩.০৭ গ্রাম

০৩

কার্বোহাইড্রেট

৮৯.১৮ গ্রাম

০৪

ফাইবার

৪.৫ গ্রাম

০৫

ক্যালসিয়াম

৫০ মিলিগ্রাম

০৬

আয়রন

১.৮৮ মিলিগ্রাম

০৭

ম্যাগনেশিয়াম

৩২ মিলিগ্রাম

০৮

ফসফরাস

১০১ মিলিগ্রাম

০৯

পটাশিয়াম

৭৪৯ মিলিগ্রাম

১০

সোডিয়াম

১১ মিলিগ্রাম

১১

ভিটামিন সি

২.৩ মিলিগ্রাম

১২

ভিটামিন ই

০.১২ মিলিগ্রাম

কিসমিসের পুষ্টিগুনের উপকারিতা

এবার আসু কিসমিসের বিভিন্ন পুষ্টিগুনের উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক।

ক্যালোরি

ক্যালোরি আমাদের দেহে বিভিন্ন কাজ করতে শক্তির জোগান দিয়ে থাকে।

প্রোটিন

কিসমিসে থাকা প্রোটিন শরীরের ত্বক, চুল, নখ ও হাড় বিকাশে সহায়তা করে।

কার্বোহাইড্রেট

কিসমিসে থাকা কার্বোহাইড্রেটগুলি আমাদের শরীরে গ্লুকোজ হিসেবে দ্রুত রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে থাকে।

ফাইবার

হজম স্বাস্থ্য এবং নিয়মিত অন্ত্রের জন্য ফাইবারের বিশেষ প্রয়োজন যা কিসমিসে রয়েছে।

ক্যালসিয়াম

আমরা জানি ক্যালসিয়াম শরীরের হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। যা কিসমিসে রয়েছে।

আয়রন

আয়রন শরীরের রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে।

ম্যাগনেসিয়াম

আমাদের শরীরের হাড় গঠনের ক্ষেত্রে ম্যাগনেসিয়াম এর বিশেষ প্রয়োজন। যা কিসমিস থেকে পাওয়া যায়।

পটাশিয়াম

পটাশিয়াম পেশী সংকোচন এবং স্নায়ু সংকেত নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

সোডিয়াম

সোডিয়াম আমাদের দেহে অ্যাসিড এবং ক্ষারীয় অবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ভিটামিন সি

ভিটামিন সি ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিক্যালের হাত থেকে স্বককে রক্ষা করে।

শরীর সুস্থ রাখতে কিসমিসের উপকারিতা

প্রথমত: শরীরের সুস্থ রাখতে ও বদ হজম দূর করতে সহায়তা করে কিসমিস। কারো বদ হজমের সমস্যা থাকলে সে যদি নিয়মিত কিসিম খেয়ে থাকে তাহলে তার সে সমস্যা দুর হবে। কিসমিসে পটাশিয়া ও ম্যাগনেশিয়া উপদান থাকার কারনে এ উপদানগুলি এসঙ্গে বদহজমের সমস্যা দুর করে থাকে।

দ্বিতীয়ত: কোলেস্টেরল হতে দূরে রাখতে সহায়তা করে কিসমিস। কিসমিস কলেস্টেরল মুক্ত, কিসমিসে দ্রবনীয় ফাইবার খুব উচ্চপরিমান থাকে এবং এ দ্রব্যনীয় ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

তৃতীয়ত: ওজন বৃদ্ধি করতে কিসমিস বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি আপনার ওজন বৃদ্ধি করতে চান তাহলে আপনি নিয়মিত কিসমিক খেতে পারেন। এর পাশাপাশি শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি করে থাকে।

চতুর্থত: কিসমিস অ্যানিমিয়া দুর করতে কিসমিসের ভুমিকা অপরীসিম। কিসমিসে থাকা যথেষ্ট পরিমান থাকা আয়রত অ্যানিমিয়া দুর করতে সাহায্য করে এতে নতুন রক্ষ তৈরি করে ও দেহে ভিটামিন বি এর অভাব পুরন করে।

পঞ্চম: কিসমিস দেহের হাড় শক্ত করে। কিসমিসে থাকা ক্যালসিয়াম দেহের হাড় শক্ত করে । এছাড়াও কিসমিসে বোরন নামক উপাদান থাকায় ক্যালশিয়াম শোষন করে হাড় গঠন করে থাকে।

৬ষ্ঠ:ক্যানসারের বিরোধী হিসাবে কিসমিসের উপকারিতা অনেক। ক্যান্সার বিকাশের প্রাথমিক কারন ফিরেডিক্যালস। ক্যান্সারে উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিডেন্স ক্যান্সারের ফ্রি রেডিকেন্স নষ্ট করে ক্যান্সার হতে বাধা দেয়।

সপ্তম: পাচন তন্ত্রের জন্য কিসমিসের উপকারিতা অনেক। কিসমিসে থাকা ফাইবার দেহের বজ্র উপাদান অপসারন করে এবং হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

অষ্টম: কিসমিস মুখের সাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। অনেকে মনে করে কিসমিস মিষ্টি হওয়ার কারনে দাতের জন্য খারাপ। কিন্তু এ কথা ঠিক নয়। কিসমিসে থাকা এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা দাতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দুর করতে সাহায্য করে।

নবম: চোখের জন্য কিসমিস খুবই উপকারি। এতে থাকা ভিটামিন এ, এবিটা ক্যারাটিন এবং ক্যারাটনাইড রয়েছে। যা চোখের জন্য খুবই অপকারি। এতে অ্যাটিঅকসিডেন্ট রয়েছে যা রেডিকেন্ট এরসঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে।

উচ্চরক্তচাপে কিসমিসের ভূমিকা

কিসমিস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিসমিসে থাকা পটাসিয়ামের কারনে শরীরের সোডিয়ার ব্যালেন্স ঠিক থাকে এতে করে আপনি উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পাবেন।

যৌন মিলনে কিসমিসের উপকারিতা

কিসমিস যদি সঠিক নিয়মে কেউ খেয়ে থাকে তাহলে তার যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এর জন্য কিসমিস ও মধু যদি এক সঙ্গে খাওয়া যায় তাহলে হরমন টেসটেসটোরাল বৃদ্ধি পায়। মুলত মধু ও কিসমিস মিশিয়ে খেলে বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যে টেসটেসটোরাল বৃদ্ধি পায়। যার ফলে শরীরের পেশি ও যৌন স্বাস্থ্য সুদৃহ করে তোলে। এছাড়াও শুক্রানু কাউন্ট বাড়াতে সহায়তা করে।

সুক্রানু কাউন্ট অনেকের ই সমস্যা হয়। এজন্য প্রতিদিন মধুর সাথে কিসমিস মিক্স করে খেলে উক্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি কিসমিসের সাথে মধু মিশিসে খাওয়া যায় তাহলে আপনার সুক্রানুর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন দূর্বলতা দুর করতে সাহায্য করে।

কিসমিস খাওয়ার নিয়ম

কিসমিস আপনি যে কোন সময় খেতে পারে। কেউ রাতে খেয়ে থাকেন আবার কেউ সকালে খেলে থাকেন। তবে কেউ যদি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ১০-১২ টি কিসমিস পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখেন এবং সকালে খালে পেটে সেই পানি সহ কিসমিস গুলো চিবিয়ে খান তাহলে আমার মনেহয় ভাল ফলাফল পাওয়া সম্ভবন।

উপসংহার

কিসমিস একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ শুকনো খাবার। কিসমস বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে এর মধ্যে থাকা উপদানগুলি থেকে। তাই আপনি নিয়মিত নিজের শরীর স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখার জন্য কিসমিস খেতে পারেন।
 
লেখকের মন্তব্য: কিসমিস একটি উপকারী মিষ্টি জাতীয় খাবার। এটি বাজারে খুব সহজ ভাবে পাওয়া যায়। তাই আপনি সুস্থ্য থাকার জন্য ও উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিদিন কিসমিস খেতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url