কোলাজেন বৃদ্ধির উপায়

কোলাজেন মানব শরীরের জন্য এক গরুত্বপূণ উপাদান। আমাদের অনেকেরই ধারনা নাই কোলাজেন কি? কোলাজেন মানব দেহের বিশেষ করে ত্বকের জন্য বিশেষ উপযোগী এক পদার্থ। শরীরের কোলাজেনের ঘারতি হলে কি কি হয় এবং এ কোলাজে বৃদ্ধির উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই মানোযোগ দিয়ে পুরা পোস্টটি পড়বেন আশা করছি।
কোলাজেন বৃদ্ধির উপায়
কোলাজেন মুলত ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি সহ ত্বককে সুন্দর, ঝুলে পাড়া রোধ সহ আপনার শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে।

ভূমিকা

আমরা আমাদের শরীরের ভিতরের বিভিন্ন বস্তু নিয়ে সরাক্ষন ব্যস্ত থাকি। ভালোমন্দো বিচার বিচেনা করে খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা কি আমাদের শরীরের ত্বকের দিকে বিশেষ কোন নজর দিয়ে থাকি। উত্তরে হবে না, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে হা হতে পারে। কারণ অনেকে বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু আমরা যারা যে সকল প্রশাধনী ব্যবহার করে থাকি তা মুলত কত জন আছি যারা উক্ত প্রশাধনীটি আসল না নকল চিনি।
 
 
আবার অনেকে আছে কোন বিচার বিশ্লেষন না করে প্রশাধনী ব্যবহার করি। কেউ সঠিক ভাবে নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে পারিনা বা জানিনা। এতে করে আমাদের শরীরের ত্বর অল্প বয়সে উজ্জলতা হারাতে থাকে এছাড়াও চোখের নিচে কালো দাগ, ত্বক ঝুলে পড়া ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়।

কোলাজেন কি

কোলাজেন মুলত আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন। এটি আমাদের শরীরের হাড়, জয়েন্ট ও তন্তুতে পাওয়া যায়। এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট আঠার মত ধরে রাখতে সাহায্য করে। কোলাজেনের কারনে আমরা হাটতে, দোড়াতে, হাসতে এমনকি চলাফিরা করতে পারি। আমরা যদি শিশুদের দিকে লক্ষ করলে দেখতে পাই তাদের শরীরের ত্বক মুলত বয়ষ্ক লোকের তুলনায় অনেক টান ও মশৃন। কারন বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের কোলাজেন কমতে থাকে।

কোলাজেনের অভাবে কি কি হয়

কোলাজের অভাবে আপনার ত্বক অকালে নষ্ট হয়ে যায়, ত্বকের মধ্যে গর্ত দেখা দেয়, ত্বক গলিয়ে যায় ইত্যাদি সমস্যা হয় কোলাজেনের অভাবে। কোলাজেন মুলত এমন একটি উপাদান যা হলো আপনার ত্বককে টান করে এবং মশ্রীন করে রাখতে সাহায্য করে। আপনি যদি আপনার শরীরের কোন এক অঙ্গের ত্বক টেনে ধরে আবার ছেড়ে দেন তাহলে দেখবে ত্বক আবার পূর্বের মত টান হয়ে গেছে। মুলত কোলাজেন এ ধরনের কাজ করে থাকে।

আপনি যদি আপনার ত্বকের উজ্জলতা নিয়ে চিন্তিত থাকেন এই যে, আপনার ত্বক অকালে ধুলে যাচ্ছে, মুখে ছোট ছোট গর্ত দেখা দিচ্ছে, ত্বক ঝুলে যাচ্ছে তাহলো আপনাকে কোলাজেন বৃদ্ধির খাবারগুলো খেতে হবে নিয়ম মেনে চলতে হবে।

কোলাজেন ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ

কোলাজেন ভেঙ্গে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো বয়স। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের শরীরের কোলাজেন কমতে থাকে। এছাড়াও খাদ্যাভাস, সূর্য থেকে পাওয়া ইউভি রে শরীরের কোলাজেন ভেঙ্গে ফেলে। এছাড়াও আমাদের খাদ্যাভাস, লাইফ স্টাইল, ঘুম ইত্যাদি কারনেও কোলাজেন নষ্ট হয়ে যায়। 

এছাড়াও পরিবেশ দুষন, শব্দ দুষন, অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়াও কোলাজেন নষ্ট করে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভুমিকা পালন করে। এক গবেষনায় দেখা যায় আমাদের শরীর থেকে প্রতি বছর গড়ে ১% কোলাজেন নষ্ঠ হয়ে যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় বয়সের তুলনাল অনেক বেশি কেলাজেন নষ্ট হয় যার জন্য তাকে অল্প বয়সেই অনেক বয়স্ক মনে হয়।

এখন আসুন কি করলে আমাদের শরীরের কোলাজেন বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।

কোলাজেন বৃদ্ধির উপায়

এন্ট্রি অক্সিডেন্ট প্রোডাক্ট ব্যবহার করা

পরিবেশ দূষনের ফলে আমাদের শরীরের ত্বকে ফ্রি-রেডিকেল জ্যামেজ সৃষ্টি হয়। বায়ু, পানি, শব্দ দুষন, পরিবেশ দুষন ইত্যাদি কারনে আমাদের শরীরের কোলাজেন নষ্ট হয়। আর এ ধরনের ফ্রিরেডিকেল প্রভাব কমিয়ে আনার জন্য যে ধরনের প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে এন্টি অক্সিডেন্ট প্রডাক্ট বলা হয়। এন্টি অক্সিডেন্ট প্রোডাক্ট চিনার উপায় বা চিনবেন যে ভাবে দেখে বুঝবেন ভটামিন সি, নিয়ানিামাইড, রেটিনল, Azelaic Acid, Glycolic Acid, Soy, ভিটামিন ই এই ধরনের উপাদানগুলো থাকবে।

কোলাজেন উৎপাদনে সক্ষম প্রোডাক্ট ব্যবহার

এখন বাজারে আপনি অনেক কোলাজেন বৃদ্ধির প্রোডাক্ট দেখতে পাবেন কিন্তু আপনি যদি সেই প্রোডাক্টে ভিটামিন সি রেটিনল না দেখেন বা না থাকে তাহলে সে প্রোডাক্ট থেকে কোলাজেন বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। তাই যে প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন তাতে ভিটামিন সি রেটিনল থাকা জরুরী।

লাইফস্টাইল

আমরা যদি উপরের সকল প্রোডাক্ট ব্যবহার করি কিন্তু লাইফস্টাইল পরিবর্তন না করি তাহলে কোন লাভ নাই। কারণ আপনি যদি নিয়মিত যথেষ্ট না ঘুমান, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করেন, স্বাস্থ্য সম্মত খাবার না খান তাহলে আপনার শরীরের কোলাজিনের অভাব দেখা দিতে পারে। তাই তারুন্ন ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমানো এবং সাস্থ্যকর ডায়েট এর জুরী নাই।

কোলাজেন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ

আপনি প্রতিদিন আপনার খাবারে কোলাজিন যুক্ত খাবার রাখতে পারেন। যেমন ফলমুল, মাছ, মুরগির মাংস সবুজ শাকসবজী ইত্যাদি।

অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি যাতীয় খাবার পরিহার

আপনি যদি অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি যাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন তাহলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রনে আনা দরকার। কারন অতিরিক্ত মিষ্টি বা চিনিযুক্ত খাবার আমাদের শরীরের কোলাজেন নষ্ট করতে পারে। আর এধরনের কাজকে বলা হয় GLYCATION. সুতরাং আপনাকে এ ধরনের খাবারে একটু সচেতন হওয়া জরুরী।

স্মকিং ও ডিংকিং পরিহার

আপনি যদি আপনার শরীরের তারুন্ন ধরে রাখতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই স্মকিং ও যেকোন ধরনের ডিংকিং পরিহার করতে হবে।

সূর্য রশ্মি

সূর্য রশ্মি আপনার শরীরের কোলাজেন নষ্ট করতে পারে। তাই আপনাকে সান পোটেকশান নিতে হবে। কারণ সূর্য হতে পাওয়া ইউভি রে শরীরের কোলাজেন ধ্বংস করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি বাহিরে যেতে চাইলে অবশ্যই সান পেটেকশান ক্রিম ব্যবহার করবেন। আপনি যদি এ ধরনের ক্রিম ব্যবহার না করতে পারেন তাহলে ছাতা, সানগ্লাস, স্কার্প, মাক্স ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।

হরমোন

শরীরের কোলাজেন ধ্বংসের জন্য অনেক আংশে হরমোন দায়ী থাকে। কারনে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হরমোনের ঘারতি ওয়ায় শরীরে কোলাজেন নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে মেয়েদের গর্ভাবস্থায় এবং পিরিয়ডের পর হরমোন ঘারতি হতে পারে তাই আপনি একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পরেন।

প্রফেশনাল ট্রিটমেন্ট

মাইক্রোনিডলিং লেজার সহ এখন অনেক ধরনের প্রফেশনাল ট্রিটমেন্ট রয়েছে যেগুলো ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি প্রফেশনাল ট্রিনমেন্ট নিতে পারেন। তবে আমার পরামর্শ হলো আপনি নিজে থেকে এ ধরনের ট্রিটমেন্ট নিতে যাবেন না। তা খুবই রিক্স হতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন

মানসিক চাপ কোলাজেন ধ্বংস করতে পারে। যেমন লেখাপড়া করে তার চাপ, পারিবারিক চাপ, সংসার করার চাপ, সন্তান লালনপালন, বনিবনা না হওয়ায়র চাপ ইত্যাদি যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ ‍গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেল থাকে। তাই আপনাকে এ ধরনের সমস্যা এড়াতে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার দিকে নজর দিতে হবে।

উপসংহার

কোলাজেন মানব শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন। কোলাজেনের উপর আপনার শরীরের সৌন্দর্য্য অনেকআংশে নির্ভর করে। তাই শুধু শুধু অবহেলা করে আপনার শরীরের কোলাজেন নষ্ট না করে উপরোক্ত তথ্যের আলোকে আপনার শরীরের কোলাজেন বৃদ্ধি ও তা রক্ষা করে নিজের সৌন্দয্য বৃদ্ধি করুন।
 
লেখকের মন্তব্য: যেহেতু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতি বছর আমাদের শরীর থেকে ১% হারে কোলাজেন নষ্ট হয় তাই আপনি যে সকল খাবার ও নিয়ম উপরে উল্লেখ করা হয়ে তা মেনে শরীরের কোলাজেন ধরে রাখতে পারেন এবং অবশ্যই নিজের যত্ন নিবেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিকে কাজ করবেন। এ আটিকেলটি পড়ে যদি আপনি সামান্য পরিমান উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অন্যকে উপকৃত হওয়ার জন্য পোষ্টটি অন্যকে শেয়ার করে দিন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url