মেথির গুনাগুন ও মেথি খাওয়ার নিয়ম

মেথি খুব সামান্য একটি সহজলভ্য রান্নার উপাদান। কিন্তু আপনি কি জানেন মেথির কতগুলো গুনাগুন রয়েছে। যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। তাই আপনি এই পুরো পোস্টটি পড়ে জানতে পারবেন মেথির গুনাগুন ও মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
 
মেথির গুনাগুন ও মেথি খাওয়ার নিয়ম

মেথি যে কোন মুদি দোকানে পাওয়া যায়। এটি রান্নার পাঁচফোরন হিসাবে ব্যবহারও হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি যদি মেথি নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে এটি আপনার শরীরের বিশেষ করে টেসটেসটোরেন হরমন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন সহ নানা ধরনের কাজে এটি সাহায্য করে থাকে।

ভূমিকা

মেথি এক প্রকার ছোট ছোট দানা যাতীয় বীজ। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উপকারী পদার্থ। আমরা যারা ভেষজ উপাদানের মাধ্যমে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে চাই সেই সকল ভেষজ উপদানের মধ্যে মেথির জুরি মেরা ভার। তাই আমরা যদি মেথির গুনাগুন সম্পর্কে জানি এবং মেথি নিয়মিত নিয়ম মেনে খেতে পারি তাহলে আমরা এ থেকে উপকৃত হতে পারবো বলে আমি মনে করি।
 
 
তাই আসুন আর দেরি না করে মেথিতে কি কি রয়েছে এবং এর থেকে আমরা কি কি উপকার পেয়ে থাকি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।

টেসটেসটোরেজ হরমন বৃদ্ধি

আমরা যদি ভেষজ উপাদানের মাধ্যমে আমাদের শরীরের টেসটেসটোরাল হরমন বৃদ্ধি করতে চাই তোহলে এ ক্ষেত্রে মেথি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। কারণ ভেষজ উপাদানের মধ্যে মেথি টেসটেসটোরাল হরমন বৃদ্ধিতে এর কোন জুরি নাই। আমরা সকলে এ বিষয়ে অবগত যে টেসটেসটোরেল একটি সেক্সসিয়াল হরমন। এ হরমন আমার শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
 
 
এছাড়াও এ যাতীয় হরমন আমাদের হাড়কে শক্ত করতে যাহায্য করে, সৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, চোখের দৃষ্টি শক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে, শারীরিক অক্ষমতা জনিত সমস্যা। এধরনের সমস্যা থেকে মেথি আপনাকে অনেকটা দুরে রাখতে সাহায্য করবে।

বুকের দুধ বৃদ্ধিতে মেথির ভূমিকা

যে সকল মায়েরা ব্রেস্ট মিল্ক বা স্তন দুধ কম হওয়া জনিত সমস্যায় ভুগছেন সে সকল মায়েরা যদি নিয়ম মেনে মেথি খেতে পারে তাহলে তাদের ব্রেস্ট মিল্ক বা স্তন দুধ বৃদ্ধিতে মেথি বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তার কারণ মেথির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন ও ফ্লাবয়েল্স যা মায়েদের স্তন্য দুর্ধ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর মধ্যে আরেক ধরনের উপাদান রয়েছে যার নাম ডিওসজেনিন যা মায়েদের দুধের মধ্যে ফ্লো বাড়াতে যাহায্য করে।
 
এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে ফাইটোইস্টোজেন যা মহিলাদের শরীরে স্টোজেন হরমনের মত কাজ করে। এর ফলে মহিলাদের স্তনে দুধ বহনকারী যে ডাক রয়েছে সেগুলোকে উত্তির্ন করতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি এ ধরনের সমস্যা থাকেন তাহলে আপনি মেথি নিয়মিত খেতে পারেন।

ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে মেথির উপকারিতা

ডায়াবেটিস কন্টোল বা ব্লাড সুগার কন্টোল রাখতে মেথি বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে একধরনের সলিবল ফাইবার রয়েছে যার নাম গ্লকোমেনান যা আমাদের শরীরের কার্বোহাইড্রেট এবজর্বকে স্লোডাউন করতে সাহায্য করে। যার ফলে আমরা যেকোন খাবার খাওয়ার পরে আমাদের রক্তের মধ্যে হঠাৎ করে সুগারের মাত্রা বাড়তে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে টাইগোনালিন ও ফেলিউগেসিন যা ইনসুলিনের সেনসিটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে।

আলসার ও গ্যাসটিক সমাধেন

আলসার ও গ্যাসটিক সমস্যা যাদের রয়েছে তারা যদি ১০-১৫ টি করে মেথি দানা দিনে অন্তত ২-৩ বার খেতে পায়েন তাহলে গ্যাসটিক জনিত সমস্যা দুর হয়ে যাবে। এবং এভাবে নিয়মিত খেতে থাকলে আলসারের মত সমস্যাও সমাধান হবে।

সর্দি কাশি গলাব্যথাতে মেথির গুনাগুন

শীতের শুরুতে বা ঋতু পরিবর্তনের কারনে অনেকের সর্দি, কাশি, গলাব্যথা এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই যদি আপনি নিয়মিত মেথি খেতে পারেন তাহলে আপনার গলার মধ্যে মধ্যে যে কফ জমা থাকে সেগুলোকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে মেথি। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে ফেনোলিক এসিড, এবং ফ্লাবনওয়েল্স যা আমাদের গলার মধ্যে যে ইনফ্লমেশান হয় সেগুলো গলে যেতে সাহায্য করে এর ফলে গলা ব্যথা, কাশি এ ধরনের সমস্যাগুলো সেরে যায়।

এছাড়ার আপনি যদি নিয়মিত মেথি খেতে পারেন তাহলে এটি আপনার শরীরের মধ্যে থাকা খারাপ কোলেস্টোরেলগুলি ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে ইস্টটোডাল স্যাপনিল নামক এক ধরনের উপাদান যা শরীরের খারার কোলেস্টোরেলগুলো বের করে দিতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে

ওজন কমাতে মেথি বিশেষ ভুমিকা পালন করে। মেথির মধ্যে রয়েছে গ্লকোটোমেনন নামক এক ধরনের উপাদান যার কাজ হলো আপনাকে ক্ষুদা লাগা থেকে বিরত রাখে। আপনি যদি মেথি খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার সহজে খিদা লাগেনা এ গ্লাকটোমেনন এর কারনে।

চুলপড়া বন্ধ করতে মেথির উপকারিতা

আপনি যদি নিয়মিত মেথি খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার ‍চুলপড়া এ ধরনের সমস্যার সমাধান হবে। মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমান আয়রন ও প্রোটিন যা চুল পড়া রোধ করে চুলের গুড়া শক্ত রাখে এবং চুল মজবুত রাখে। আপনি যদি মেথি গুড়া করে তাতে যেকোন নারিকেল তেল দিয়ে পেষ্ট করে রেখে দেন এবং তা চুলের গোড়ায় ভালভাবে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে তা শ্যাম্পু দিয়ে ভারো করে ধুয়ে দেন তাহলে আপনার চুলের সমস্যা দুর হবে। এছাড়াও আপনার চুলে খুশকি থাকলে তা দুর হবে, চুল লম্বা হবে ও স্কিলকি হবে।

মেখি খাওয়ার নিয়ম

অনেকে অনেক ভাবে মেথি খেয়ে থাকেন। কেউ চিবিয়ে খেয়ে থাকেন, কেউ অঙ্কুর করে খেয়ে থাকেন। কিন্তু সব থেকে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায় মেথি চিবিয়ে খেলে ও মেথি চায়ের মতো করে খেলে। চায়ের মত করে খেতে হলে আপনাকে প্রথমে একটি পত্রে পানি নিয়ে তা ফুটাতে হবে। এবং ফুটতে থাকা পানির মধ্যে মেথি দিয়ে আরো ৪-৬ মিনিট ফুটাতে থাকতে হবে।
 
 
একসময় এই পানির রং পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং তা যদি আপনি হালকা কুসুম কুসুম গরম অবস্থায় খেতে পারেন তাহলে তাহলে এর সব থেকে ভাল ফলাফল পাবেন। তবে মনে রাখবেন এভাবে খেলে সকালে খালে পেখে খাবেন। তবে খাওয়ার পর বেশিক্ষন অন্য খাবার না খেয়ে থাকবেন না। একটু তারাতারি খাওয়ার চেস্টা করবেন। এবং টানা খাবেন না ২ সপ্তা খাওয়ার পর ১ সপ্তাহ গ্যাপ দিবেন আরবার খাবেন।

উপসংহার

যারা ঘরোয়া উপায়ে সুস্থ থাকতে চান তাদের জন্য মেথির জুরি মেলা ভার। তাই আপনি যদি উপরোক্ত নিয়মে মেথি খেতে পারেন তাহলে আপনি নিজে নিজে দেখতে পাবেন আপনার কটতা পরিবর্তন হয়েছে।

লেখকের মন্তব্য: মেথি একটি বিশেষ গুন সম্পন্ন ভেষজ উপাদান। তাই পানি নিজে নিজে ঘরে ঘরো পদ্ধতিতে এর ফলাফল পেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন গর্ভবতী ও শিশুদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন কিছ প্রয়োগ করতে যাবেন না। পোস্টটি পড়ে উপকৃতি হয়ে থাকলে অন্যদের মাঝে শেয়ার করে দিতে অনুরোধ করা হলো। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url