তালমাখনা কী-তালমাখনার উপকারিতা

তালমাখনা সাধারণত তাল কিংবা মাখনাফুল কোন কিছুর সঙ্গেই সাদৃশ্যপূর্ণ নয়, তারপরেও এর নাম তালমাখনা। এটি একটি উৎকৃষ্ট ভেজষ ওষুধ। এই গাছটি সাধারণত বাংলাদেশের বিভিন্ন নিম্নভূমি অঞ্চল যেখানে বছরে কিছু সময় পানি জমে থাকে বিশেষ করে ঐ সমস্ত স্থানে বেশি দেখা যায়। আমাদের কাছে তালমাখনা কী-তালমাখনার উপকারিতা সমূহ অনেকের কাছে অজানা থাকতে পারে।
তালমাখনা কী-তালমাখনার উপকারিতা


তাই আসুন আজ তালমাখনা এই বিশেষ ভেজষ ওষুধ টি সম্পর্কে আমরা বিশেষ ভাবে পরিচিত হয়।

ভূমিকা

আল্লাহর দান প্রকৃতির সকল গাছগাছরা মানুষের উপকারে লাগে। কিন্তু আমাদের তেমন কোন সঠিক ধারনা না থাকার কারনে আমরা এগুলোর তেমন কদর করিনা। এর মধ্যে তালমাখনা একটি বিশেষ অন্যতম। তালমাখনা মানব দেহে শক্তি বর্ধক সহ যৌন ক্ষমতার দিক থেকে বিষেশ উপকার।

পরিচিত

তালমাখনা এর ইংরেজি নাম Marsh Barbel/Hygrophila Spinose এবং বৈজ্ঞানিক নাম Hygrophyla auriculata (Sch.) Heyne. এ গাছটি গ্রামের বিভিন্ন জলাশয় বা এ ধরনের স্থানে বেশি দেখা যায়। এটি একটি লতাগুল্ম জাতীয় বর্ষজীবি উদ্ভিদের বীজ। এবং গাছ অনেক শক্ত। এ গাছের উচ্চতা প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হয় তবে অনেক ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় ৩০ সেন্টিমিটারের মধ্যেই সিমাবদ্ধ থাকে। এ গাছের প্রতিটি গিটে গিটে পাতা আর কাঁটা বের হয় ।
 

একে কাঁটা যুক্ত গাছও বলা যায়।কাঁটার রং হালকা হলদে বাদামি বর্ণের এবং পাতা তামাটে সবুজ বর্নের হয়ে থাকে। গাছের গিঁট থেকে বের হওয়া পাতাগুলো লম্বা হলেও ভিতরের দিকের পাতাগুলো তুলনামুলক খাটো। তবে কাঁটা ও পাতাগুলো উভয়ই উপরের দিকে খাঁড়া হয়ে থাকে।ফুলগুলোও গিট থেকে ফুটে। এবং ডিসেম্বর মাসে এ গাছে ‍ফুল ফোটে। গাছের ফুলের রং উজ্জল বেগুনি বা লালচে বেগুনি বর্ণের হয়ে থাকে কোন কোন সময় সাদাটে বর্ণেরও হয়ে থাকে। এ উদ্ভিদের পাতা ও শিকড় ও বীজ ঔষধি হিসেব ব্যবহৃত হয়। এ উদ্ভিদের পাতা, শিকড় ও বীজ গনোরিয়া, জন্ডিস, বাতব্যথা ও মুত্রাশয়ের প্রদাহ সরাতে ব্যবহার হয়।

তালমাখনা কী

মূল্যবান ভেষজ উদ্ভিদ তালমাখনা ও তালমূলী অনেকটা কাছাকাছি দুটো নাম হলেও উক্ত উদ্ভিদ দুটি আলাদা পরিবারের এবং দেখতেও আলাদা। অনেকেই এ দুটি উদ্ভিদের শনাক্ত নিয়ে বিপাকে পড়েন। তবে তালমাখনা চমৎকার ঔষধিগুনে পরিপূর্ণ এ গাছ আমাদের খুবই চেনা। উদ্ভিদটির ইউনানি নাম তালমাখনা আর আয়ুর্বেদিক নাম কোকিলাক্ষা। এবং এ গাছের ব্যবহার্য উপাদান হলো বীজ। তাই তালমাখনা বীজ বলতে উক্ত গাছের বীজকেই বুঝায়।

উপকারিতা

তালমাখনা বীজ দেহ ও মনের প্রফুল্লতা বৃদ্ধি করে। দেহের পুষ্টি ও বল বাড়াতে সাহায্য করে। এ বীজ শুক্রবর্ধক, বীর্য গাঢ়কারক, যৌনশক্তিবর্ধক ও স্বপ্নদোষ নিবারক করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডায়াবেটিসসহ অন্য যে কোন দুর্বলতা বা যৌনদুর্বলতায় এ তালমাখনা দিয়ে তৈরি ওষুধে দ্রুত তা দূর করা সম্ভব। এছাড়াও পাতা ও শাখার জোসান্দা লিভার ও কিডনির প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সহায়তা ও কোষ্ঠ্য পরিষ্কারক, মূত্র ও ঘর্ম প্রবাহক। এছাড়াও এর পাতার প্রলেপ ও সন্ধি ব্যথা দুর করতে বেশ উপযোগী।

তালমাখনা বীজ ব্যবহারের পদ্ধতি

আসুন আমরা এখন এ মহান ঔষুধি বীজ ব্যবহারের পদ্ধতি সমূহ জেনে নিয়।

সাধারণ দূর্বলতা বা দেহের পুষ্টি সাধনে

৩ গ্রাম তালমাখনা পাউডারের সাথে ১ গ্রাম পরিমাণ শতমূলী পাউডার মিশিয়ে দুধসহ প্রত্যহ সাখেল ঘুম থেকে উঠে খালিপেটে এবং রাত্রে খুবারের পরে এবং ঘুমানের আগে সেবন করতে হবে।

শুক্রমেহ ও লিউকোরিয়ায়

৩ গ্রাম তালমাখনা পাউডারের সাথে ১ গ্রাম পরিমাণ তেঁতুল বীজ পাউডার মিশিয়ে প্রতিদিন দুইবার দুধসহ খেতে হবে।

যৌন ও স্নায়ুবিক দুর্বলতায়

৩ গ্রাম তালমাখনা পাউডারের সাথে ১ গ্রাম পরিমাণ অর্শ্বগন্ধা পাউডার ও ৩ চা চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন ২ বার সেবন করতে হবে।

এছাড়াও যৌন সমস্যার জন্য আরেকটি সাধারণ ব্যবহার হচ্ছে ৫-৭ গ্রাম তালমাখনা এবং এর সমপরিমান তালমিশ্রি ও এক গ্রাস দুধ এক সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে পান করুন এতে করে আপনার বল দৃদ্ধি সহ যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি, বীর্য গাঢ়, দ্রুত বীর্যপাত রোধ, বীর্য উৎপাদন ‍বৃদ্ধি এবং যৌন আগ্রহের উন্নতি সহ ইত্যাদি উপকার পাবেন। 

তবে মনে রাখবেন তালমাখনার পরিমান ‍বৃদ্ধি করা যাবেনা। যদি তালমাখনার পরিমান বৃদ্ধি পায় তাহলে বদ হজম এর মত সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও তালমাখনা বীজ মুত্রনালির পাথর দূর করতেও বেশ সহায়ত। এছাড়াও জন্ডিস, বাতজনিত রোগে এর বীজের তেল বেশ কার্যকরী। এ তেল রান্নাতেও ব্যবহার করা যায়। এ তেল বাজারে কিনতেও পাওয়া যায়।

এছাড়াও এর আছে অনেক ঔষধীগুন। এর পাতা শিকড় ও বীজে সাবই উপকারী রাসায়নিক ‍উপাদানে পরিপূর্ণ। এতে রয়েছে এলকালয়েডস, ফাইটোস্টেরোল ও সুগন্ধের তৈলাক্ত পদার্থ। এছাড়াও রয়েছে এনজাইম ডাইয়াসটেস ও লিপেস। যার ফলে এর রস প্রস্রাসবর্ধক, মুত্রনালির নানা রকম রোগেও উপকারী।

উপসংহার

উপকারের দিকথেকে তালমাখনার বীজ সব থেকে কার্যকরী। একই সাথে বীজ তিক্ত ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে। এ বীজে রয়েছে অধিক পরিমাণে ফাইবার ও হজম বৃদ্ধি সহায়ক উপাদান। এছাড়া লো ফ্যাটযুক্ত বীজ ডায়াবেটিকস রোগের জন্য ভাল। হার্ডের পিড়া, দূর্বলতা, পিত্তথলিতে পাথর, গ্লডারের সমস্যা, মানসিক অবসাদ, যৌন সমস্যা সমাধানে এটি আর্শীবাদস্বরুপ। তবে শরীরে বয়সের ছাপ, ত্বকের মলিনতা, ব্রণের সমস্যা দূর করতেও আপনি প্রতিদিন এটি ব্যবহার করতে পারেন।

লেখকের মন্তব্য: তালমাখনা বীজ মানব দেহের জন্য এক বিশেষ উপকারী পদার্থ। এতে রয়েছে অনেক উপকারী পদার্থ এমতাবস্থায় সঠিক নিয়মে সেবন করলে  এর ফলাফল পাওয়া যাবে। নজর রাখতে হবে যেন সেবন পরিমান যেন কোন অবস্থাতে বেশি না হয় তাহলে বদহজম হতে পারে। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url