গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি সুন্নত

প্রিয় পাঠক আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি ‍সুন্নত সম্পর্কে আলোচনা করবো। আশা করি ভালো করে মনোযোগ সহকারে পড়ে নিজে উপকৃত হবেন এবং অন্যকে সেখাতে পারবেন।

আমরা শেষ নবীর উম্মত। হাদিসে বর্ণিত আছে সকল নবী রাসুল শেষ নবীর উম্মত হওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে। কিন্তু আমরা কোন আবেদন ছাড়ায় শেষ নবীর উম্মত হয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। আমরা শেষ নবীর উম্মত হওয়া সত্বেও এর মর্ম বুঝতে পারিনা। আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করুন (আমিন)

গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি সুন্নত

ভূমিকা

ইসলামীক জীবন আমরা মনে করি খুব কঠিন জীবন। কিন্তু আসলে কি তাই, না তা নয়। আমরা যদি চলার পথে রাসুলের দেখানো কিছু উপদেশ মেনে চলি তাহলে আমরা অনেক অনেক সুয়াব হাসিল করতে পারবো। ইনশাআল্লাহ।

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স) বলেছেন “যে ব্যক্তি আমার কোন মৃত সুন্নাহকে জীবিত করলো, সে যেনো আমাকেই ভালোবাসলো, আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালো বাসলো, সে তো আমার সাতেই জান্নাতে থাকবে।” (তিরমিযি ২৬৭৮)।

যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে বিমুখ হলো (সুন্নাহকে অপ্রয়োজনীয় মনে করলো) সে আমার উম্মত নয়। (বুখারি ৫০৬৩)।

আরো পড়ুন: পা ফাঁটা দুর করার সহজ উপায়

মিযানের পাল্লায় যখন একজনের হিসেবে ফরজ ও ওয়াজীবের ঘাটতি হবে, তখন তার করা সুন্নাহ ও নফল দিয়ে সে ঘাটতি পুরন করা হবে। (আবু দাউদ- ৪৮৬)

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স) বলেছেন ততোদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবেনা, যতোদিন আকড়ে ধরে রাখবে ‘কুরআন’ ও সুন্নাহ কে। (মুয়াত্তা মালিক- ১৬০৪)

যারা শুধু মুখে নয়, বাস্তবেও রাসুল (স) কে ভালবাসতে চান তারা রাসুলের প্রতিটি সুন্নাহকে গুরুত্বসহ পালনের চেষ্টা করুন, এটাই রাসুল (স) এর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা, প্রকৃত হক আদায়ের প্রচেষ্টা।

গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি সুন্নত

এবার আসুন রাসুলুল্লাহ হযরত মোহাম্মদ (স) এর ৩০ টি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত সম্পর্কে জেনে নিয়।

  1. সুন্নাহ হলো সর্বদা মুখে মিষ্টি হাসি রাখা ও প্রাণোচ্ছল থাকা। কথা বলার সময় হাসিমুখে কথা বলা ও চরম মুহূর্ত ব্যতিত চেহারায় গোমরা, দার্শনিক, রাগ মেজাজি ভাব না আনা। (ইবনে মাজাহ৩৫২)
  2. সুন্নাহ হল সর্বদা রাগ দমিয়ে রাখা, রাগী চেহারা গোপন করা ও চরম মুহূর্ত ছাড়া তা কাউকে বুঝতে না দেওয়া (ইবনে মাজাহ ৩৫৩)
  3. রাসুল (স) বলেছেন যখন তোমার রাগ হবে তখন দাড়িয়ে থাকলে বসে পড়ো, বসে থাকলে শুয়ে পড়ো এবং তাতেও কাজ না হলে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকো অথবা মাটিতে গড়াগড়ি খেতে কিংবা সাথে সাথে ওযু করে নিতে বলেছেন। যে ভাবেই হোক রাগকে দমাতে হবে। (আবু দাউদ ৪৭৮৪)
  4. চলার পথে বা রাস্তায় দেখতে পাওয়া কিছু উপাদান যেগুলো থেকে সমস্যা সৃষ্টিকারী বা বাধাদানকারী কষ্টদায়ক বস্তু যেমন কলার খোসা, ইট-পাথর, ময়লা ইত্যাদি সড়িয়ে দেওয়া (বুখারি ৬৫৪)
  5. শত্রুর জন্য অধিক মাত্রায় হিদায়াতের দুয়া করা ও রহমত চাওয়া, কেউ গালি দিলে বা কোনো ক্ষতি-অপকার করলে প্রতিশোধের চিন্তা পর্যন্ত না করে শুরুতেই তার জন্য হিদায়াতের দুয়া করা।
  6. সালামের উত্তরে এক শব্দ বাড়িয়ে বলা ও পূর্ণ সালাম দেওয়া (আবু দাউদ ৫১৯৫)।
  7. পরিচিত কোন ব্যক্তির সাথে দেখা হলে মুচকি হাসি দেওয়া (সহি মুসলিম ২৫৮০)
  8. বড়দের সর্বদা সম্মান করা, যেমন রাস্তায় আগে যেতে দেওয়া, কিছু পরে গেলে তা উঠিয়ে দেওয়া আরো ইত্যাদি ইত্যাদি। কখনোই তাদের সাথে উচু স্বরে কথা না বলা এবং কিছুতেই বিরক্ত না হয়ে ভদ্রভাবে আদব রেখে কথা বলা (তিরমিজি ১৯২১)
  9. মসজিদ অথবা মজলিসে অন্যের ঘাড় না টপকিয়ে যেখানে স্থান পাও সেখানেই বসা।
  10. যথাসম্ভব হাই তোলা রোধ করা ও বাম হাতের উল্লোপিঠ দিয়ে তা রোধ করা (সহি বুখারি ৩২৮৯)
  11. দাড়ি যথাসম্ভব বড় করা ও গোফ ছোট করা (মুসলিম ৪৯১) উল্লেখ্য দাড়ি এক মুষ্টির চেয়ে বড় করা সুন্নাত, আর কমপক্ষে এক মুষ্টি দাড়ি রাখা চার মাযহাব অনুযায়ী ওয়াজিব বা আবশ্যক, অন্যথায় গুনা হবে।
  12. বসে জুতা পরা ও খোলা, (না পারলে অন্তত হাটু গেড়ে বসে নিন) (আবু দাউদ ৪১৩৫)
  13. দুই জুতা বা দুই মৌজা একত্রে ও ঠিকভাবে পরা, শুধু এক পায়ে পরে না হাটা (সহি মুসলিম ২০৯৯)
  14. অন্যের ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে, অনুমতি নিয়ে ঢোকা ও নিজের পূর্ণ পরিচয় দেওয়া (বুখারি ৬২৫০)
  15. অন্যের ঘরে উকি-ঝুকি না মারা, অন্যের ঘরে থাকাবস্থায় অন্যের রুমে থেকে না তাকানো, বেগানা নারী/পুরুষের সাথে ঘরে একাকী অবস্থান না করা (সহি মুসলিম ২১৫৬) [উল্লেখ্য, রক্তসম্পর্ক মাহরাম কারো সাথে কোথাও কোন ঘর বা রুমে পর্যন্ত একাকী অবস্থান করা হারাম। আবার দূর থেকে কারো বারান্দা , বেলকুনি, ঘরের দিকে তাকানোও স্পষ্টত সুন্নাহের খেলাফ ও নাজায়েয পর্যায়ের কাজ।
  16. শিশুদের পছন্দ করা, স্নেহ করা, তাদের সাথে খেলা করা, কখনো রাগ না হওয়া বা সহজে বকা না দেওয়া, বরং খেলার ছলে ভুল সংশোধন করে দেওয়া বা আদব শিক্ষা দেওয়া সুন্নত (বুখারি ৫৬৫১)
  17. পশু-পাখিদের ভালোবাসা ও খাওয়ানো, বিশেষ করে ঘরে বিড়াল পোষা (নাসাই ৩৪১) [হাদিসে আরো পাওয়া যায়, রাসুল (স) খাওয়া শেষে উচ্ছিষ্ট হাড়-কাটা পানিতে ফেলতে নিষেধ করেছেন, কেননা তাহলে কুকুর-বিড়ালরা তার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে।
  18. অপরজনকে সাহায্য করা বা তার কোন প্রয়োজন পূরন করে দেওয়া সুন্নত (তিরমিজি ১৯৫৬)
  19. নিজে গরিব হলেও অপরকে যথাসম্ভব ঋণ দেওয়া, সামান্য পরিমাণে হলেও ঋণ দেওয়া সুন্নত (আহমাদ ২৩০৪৬)
  20. কারো সাথে কথা বলার সময়, অন্যজন কথা শেষ করার আগেই মাথা (দৃষ্টি) না সরানো বা নিজে থেকে কথা শেষ না করে দেওয়া। (এটা ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য) কথা শোনার ক্ষেত্রেও তা-ই (আবু দাউদ ৪৭৯৪) [উল্লেখ্য, একত্রে তিনজন চলার সময় দুজনের একাকী কথা বলাকেও ইসলাম নিষেধ করেছেন।]
  21. দুয়ায় নিজের আগে বাবা-মা, পরিবার ও আত্নীয়দের জন্য দুয়া করা (সিরাত)।
  22. রাস্তায় চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে অপরের গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কা না দেওয়া। ভদ্রতার সাথে সরতে বলা সুন্নত। (আহমাদ ১৪২৩৬)
  23. ছোট-বড় সকলেকে আগে সালাম দেওয়া। (সহি মুসলিম ৫৮)
  24. অসুস্থ লোকদের দেখতে যাওয়া ও অসুস্থের সেবায় নিয়োজিত থাকা, সে শত্রু হলেও (মিশকাত ১৫২৭)
  25. সকালে সালাতুল ফযর আদায় করে না ঘুমানো, সূর্যোদয় পর্যন্ত জায়নামাজেই থাকা, কিংবা বাইরে হাটতে চলে যাওয়া, কুরআন তিলাওয়াত, মাসনূন দুয়া পড়া, ‍সুন্নাত সম্মত যিকির করা ইত্যাদি। (মুসলিম ৬৬০)
  26. অন্যকে দূর্ভাবনা-সংশয়, ভয়ের কথা বা নেতিবাচক কথা না বলা ও বেশি বেশি অনুপ্রেরণামুলক কথা বলা সুন্নত, হাদিস অনুযায়ী ভালো কথা বলাও সদাকাহ (আহমাদ ২৮৬১৮)
  27. গরীব-দরিদ্রকে খাওয়ানো, সে বিধর্মী হলেও (মুসলিম ১০৫১), বিপদগ্রস্থকে শান্তনা দেওয়া (সিলসিলা ৩৩০৫), সর্বদা অন্যকে সাহায্য করাও অন্যের দোষ-ক্রুটি ভুলের কথা গোপন রাখা (আবু দাউদ ৪৯৪৬)।
  28. ঘরের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করা (সহি বুখারি ৬৭৬)
  29. যেকোনো ধরনের অসুস্থতা বা রোগে কুরআন দ্বারা রুকইয়াহ করা ও হিযামা করানো এবং শিফা বা রোগমুক্তির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট নিয়মে মধু, কালোজিরা ও দারুচিনি খাওয়া সুন্নত (সহি বুখারি ৫৪৯৬)
  30. ঘুম থেকে উঠে হাত দিয়ে মুখে ঘুমের আবেশ মুছতে থাকা (বুখারি ১৮৩)। 

উপসংহার 

রাসুলের সুন্নত খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা এস সমস্ত সাধারণ বিষয়গুলো মেনে চললে অনেক ভালো কিছু করা সম্ভব। তাই আসুন রাসুলের সুন্নত মোতাবেক আমরা আমাদের জীবন গড়ি এবং দেশ ও জাতীকে রক্ষা করি। তাহলেই আখিরাতে মুক্তি ও রাসুলের সাফাতে পেতে পারি।

লেখকের মন্তব্যঃ প্রিয় পাঠক আশা করি উক্ত সুন্নত সমূহ পড়েছেন এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টা কুরুন। আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ। কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url