শিশুর পুষ্টিকর খাবারের তালিকা-বয়স ভিত্তিক শিশুর খাবার তালিকা
প্রিয় পাঠক আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো সেটি হলো শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, ও পুষ্টিকর খাবার নিয়ে। তাই গুরুত্বসহকারে বিষয়গুলি পড়লে উপকৃত হবে আশা করি। আমরা সকলে নিজের থেকে শিশুর খাবারের তালিকা নিয়ে একটু বেশি চিন্তিত। কেননা একটি শিশু তার পিতা মাতার সবথেকে মুল্যবান জিনিসগুলো মধ্যে অন্যতম।
প্রতিটি মা-বাবা তার সন্তানদের নিজে চিন্তা করবে এটাই স্বাভাবিক। যেমন বাচ্চাকে কি খাওয়ানো যাবে, কোনটা খাওয়ানো ঠিক হবেনা। কোন খাওয়ালে শিশু দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং কিভাবে শিশুর স্বাস্থ্য ভালো সুস্থ্য রাখা যায় সে বিষয় নিয়ে। এর এগুলোর জন্য আমাদের জানতে হবে কি খাওয়া যায় বা খাদ্য তালিকায় কি ধরনের খাবার রাখা যায় সে বিষয় নিয়ে।
ভূমিকা
একজন পিতা-মাতার মনে রাখতে হবে বাচ্চার খাবার তালিকা ঠিক রাখা ও খাবারে সঠিক পুষ্টিকর উপদান রাখার বিষয়গুলি সম্পর্কে। কারণ একটি শিশু তার শারীরিক গঠনের ও জ্ঞানের বিকাশের অনেকটাই তৈরি হয়ে যায় তার শিশু বয়সেই। আর এ সময় তাকে সঠিক মাপের খার গুলি রাখতে হবে। আসুন এবার জানা যাক শিশুর খাবারে সেই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি।
আরো পড়ুন: লেবুর উপকারিতা
বাচ্চাদের সাধারণত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা একটু কম থাকে সেইজন্য তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় সেই সকল খাবার খাওয়াতে হবে যাতে করে সে যত বড় হবে তত সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে। একজন শিশুর হাড়, পেশী, দাঁত, নখ ও চুলের সঠিক পুষ্টির যোগান দেওয়ার জন্য শুরু থেকেই তাতের সঠিক পুষ্টিকর খাবাও সুষম খাবার দেওয়া উচিত।
আর এর ফলে যে শিশুর শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করা যায় তা নয়, তাদের মানসিক স্বাস্থেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এবার আসুন কিছু খাদ্যবস্তু দিয়ে জানা যাক যেগুলো বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
শস্য জাতীয় খাবার
আপনার শিশুর খাদ্য তালিকায় শস্য জাতীয় খাবার রাখা খুবই জরুরী। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যেন তার দৈনিক খাবারের তালিকায় শস্য জাতীয় খাবার থাকে সেদিকে। শস্য জাতীয় খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমান ফাইবার যা পাচন প্রক্রিয়া সুস্থ রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। শস্য জাতীয় খাবার বাচ্চাদের পেটের বিভিন্ন সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হেমোরয়েডের সমস্যাও দূর করতে সাহা্য্য করে।
আরো পড়ুন: ঘরে বসে ভোটার হওয়ার আবেদন করুন
বাচ্চাদের পাচনক্রিয়া ভালো হলে তাদের শারীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় বৃদ্ধি পায় এবং সুস্থ্য থাকে। এমতাবস্থায় শিশুর বাড়ন্ত বয়সে শস্য জাতীয় খাবারের উপস্থিতি অপরিহার্য। শস্য জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে যেমন গম, কিনোয়া, হোল হুইট পাস্তা, ব্রাউন রাইস, মিলেট, ইত্যাদি।
বীজ , ড্রাই ফ্রুট, নাটস জাতীয় খাবার
বাড়ন্ত বয়সে একটি শিশুর অধিক পরিমান ভিটামিন এবং মিনারেলের প্রয়োজন। আর এ ভিটামিন ও মিনারেল শিশুর বিকাশে সহায়ক ও রমোনগুলিকে উ্দ্দীপিত করে। যার ফলে বাচ্চাদের ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধি রাখতে ভুমিকা পালন করে। তাই বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমান বীজ, ড্রাই ফ্রুট, নাটস জাতীয় খাবার অন্তর্ভূক্ত করা জরুরি। নাটস শিশুর স্মৃতি শুক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীর উষ্ণ রাখে এছাড়াও নাটস শিশুর শরীরের শক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
যার ফলে একটি শিশু সারাদিন অ্যাক্টিভ থাকতে পারে। এছাড়াও বীজ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, কপার, মিনারেল, আয়রন ও ভিটামিন যুক্ত। এবং এ পুষ্টিকর উপাদানগুলি লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি করতে পারে এবং রক্তে অক্সিজেনের সঠিক পরিমাণ বজায় রাখতে সহায়তা করে।
এ জাতীয় খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে যেমন: আমন্ড, বোল্ড নাটস, চিনাবাদাম, কাজু, আখরোট, চিয়া সিড, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি।
সবুজ শাকসবজি ও ফল জাতীয় খাবার
একজন শিশুর বাড়ন্ত বয়সে সবুজ শাকসবজি ও ফলমুলের ভূক্তি অপরিহার্য। এর ফলে বাচ্চারা সুস্থ থাকবে এবং সবুজ শাকসবজি তাদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করবে। সাথে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে ও পাচন প্রক্রিয়াও সুস্থ রাখে। একজন শিশুর খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন সবুজ শাকসবজি ও ফল রাখা জরুরি।
সবুজ শাকসবজি ও ফল জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে কুমড়ো, লাল আলু, আভাকাডো, কমলালেবু, তরমুজ, বেদানা, আঙুর, পেয়ারা, আপেল ইত্যাদি। এছাড়াও একটি বাচ্চাকে প্রতিদিন এক চামচ করে মধু খাওয়াতে পারলে অনেক ভালো হয়। কারন মধু বাচ্চাদের সাইনাস থেকে অ্যালার্জেন পরিষ্কার রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
এবার আসুন কোন খাবারে কি ধরনের ভূমিকা পালন করে দেখা যাক
প্রোটিন জাতীয় খাবার
প্রোটিন জাতীয় খাবার একটি শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশের মূল চালক। প্রোটিন শরীরে বিভিন্ন সংক্রমনের অ্যান্টিবড়ি তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রোটিন থেকে প্রাপ্ত অ্যমিনো অ্যাসিডগুলো শরীরে টিস্যু, নিউরোট্রান্সমিটারের সংশ্লেষণ এবং রমোনের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্ভিদের পাশাপাশি প্রানিজ উৎস থেকেও প্রোটিন পাওয়া যায়।
প্রোটিন জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে ডাল, শিম, দুদ্ধজাত খাবার, ডিম এবং প্রাণীজ থেকেও প্রোটিন পাওয়া যায়।
চর্বি জাতীয় খাবার
শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে চর্বি জাতীয় খাবার বিশেষ অবদান রাখে। স্বাস্থ্যকর চর্বির প্রধান উৎস হলো উদ্ভিজ তেল যার মধ্যে সয়া/জলপাই/সূর্যমুখী অন্যতম এবং মাছের তেল।
আয়রন
হিমোগ্লোবিন গঠনে আইয়ন এর ভূমিকা অপরিসীম। শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে রক্তস্বল্পতায় ভূগতে পারে। যার ফলে স্মৃতিশক্তির প্রক্রিয়াকে পরিবর্তন করতে পারে। এমতাবস্থায় আয়রন জাতীয় খাবার শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন জাতীয় খাবারগুলো হলো-
শাক, মটর, ব্রকলি, বাদাম, কিশমিশ, ছোলা, মসুর। আয়রন প্রানীজ উৎসের মধ্যে রয়েছে লিভার, স্যামন, ডিম ইত্যাদি।
আয়োডিন
আয়ডিন এমন একটি খাবার যা শিশুর মানষিক স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাভাবিক ভাবে আমাদের সকলের জানা আয়োডিন সাধারণত সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমান আয়ডিন পাওয়া যায়। তাই আমাদের উচিত শিশুর খাদ্য তালিকায় নিয়মিত সামুদ্রিক মাছ রাখা এবং আয়োডিন যুক্ত লবন ব্যবহার করা।
ফলিড অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি
শরীরের বিভিন্ন বিপাকীয় প্রক্রিয়া এবং এনজাইমের জন্য কোফ্যাক্টর হিসেবে ভিটামিন বি এর প্রয়োজন অনেক। এ প্রক্রিয়াগুলো শিশুর সামগ্রিক বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক বিকাশে সহায়ত ভূমিকা পালন করে। এবং শিশুর বিভিন্ন ধরনের অসুখ থেকেও তা রক্ষা করে।
এবার আসুন বয়স ভেদে শিশুর খাদ্য তালিকাগুলি দেখা যাক
৬-৭ মাস বয়সের শিশুর খাদ্য তালিকা
এ সময় শিশুর সাভাবিক ওজন থাকে প্রায় ৫ কেজির মতো এবং তার ৭০০ কিলোক্যালোরি প্রয়োজন হয়। আর এ সময় শিশুর পরিপুরক খাদ্য আরম্ভ করা দরকার। এর থেকে বেশি দেরি হয়ে গেলে শিশুরা খাবারের সাভাবিক স্বাদ বুঝে যায় যার ফলে খেতে চায়না।
এ সময় দুখের পাশাপাশি কলা চটকে খাওয়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি চালের গুঁড়া, আটা ইত্যাদিও সিদ্ধ করে দুধের সাথে পাতলা করে খাওয়াতে পারেন। পাশাপাশি মৌসুমি ফল যেমন পাকা কলা, পেঁপে ও মিষ্টি জাতীয় ফলগুলি বাচ্চাখে খাওয়ান।
৭-৯ মাস বয়সের শিশুর খাদ্য তালিকা
এ সময় শিশু কিছুটা বড় হয় এবং নিজে থেকে খাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় একটি শিশু কালারের ওপর আকৃষ্ট হয় এবং তা হাত দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করে। তাই শিশুকে তরল খাবারের থেকে একটু শক্ত খাবার খাওয়াতে পারেন। যেমন মৌসুমি সবজি, ফুলকপি, বরবটি, পেঁপে, আলু ইত্যাদি সেদ্ধ করে খাওয়াতে পারেন যা শিশু সহজে হজম করতে পারে। এর সাথে তেলা যোগ করা যেতে পারে যাতে চর্বিতে দ্রব্য ভিটামিনগুলো সহজে শোষিত হয়।
৯-১২ বমাস বয়সের শিশুর খাদ্য তালিকা
এ সময় শিশু প্রায় বড়দের মতো খেতে পারে ফলে আগের তুলনায় আরো ঘন খাবার শিশু খেতে পারে। নরম খিচুড়ি, সিদ্ধ ডিম, ভাত, ডাল, দুধ-রুটি, দই, ক্ষীর, পুডিং ইত্যাদি খাবারগুলো শিশুকে খাওয়াতে পারেন। এছাড়াও আপনি শিশুর জন্য স্যুপ তৈরি করে দিনে ৩-৪ বার দিতে পারেন।
১-২ বছর এর শিশুর খাদ্য তালিকা
ঘরের স্বাভাবিক খাবার যেমন বড়দের খায় সেগুলোর মত শিশুকে খাওয়াতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন নরম ও কম মশলা জাতীয় খাবার যেনো শিশুরা খায়। এ বয়সি শিশুর দৈহিক ওজনের জন্য ১০০ কিলোক্যালোরি দরকার হয়ে থাকে যার জন্য পাতলা খাবার না দিয়ে ঘন খাবার দিতে থাকুন এবং তা খেতে থাকুক। যার সঙ্গে সামান্য তেল ও চিনি এ বয়সী শিশুর জন্য দরকার হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় এ সময় ৫০-৭৫ গ্রাম খাবার ২-৩ ঘন্টা পরপর দিনে প্রায় ৫-৬ বার দিতে থাকুন।
এবার আসুন কোন বয়সী শিশুর ক্যালোরির চাহিদা
উপসংহার
শিশু স্বাভাবিক ভাবে নিজে থেকে কোন কিছু খেয়ে থাকেনা। বিধায় আমাদের সঠিক নজর রেখে তাদের যত্ন সহকারে খাওয়াতে হবে। কিছুটা সময় ধরে খাওয়ান কোন ভাবে জোরে জোরে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। এতে করে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। তাই সময় নিয়ে ধিরে ধিরে একাধিক বার তাকে খাওয়ান। তবে অতিরিক্ত খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
লেখকের মন্তব্য: শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে তাই সঠিক ভাবে সঠিক নিয়মে শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান এবং অতিরিক্ত যত্ন নিন যেন শিশু অতিরিক্ত অসুস্থ না হয় সেদিকে। শিশুকে অল্প অল্প করে খাওয়ান তবে অনেক বার খাওয়ান। কোন ভাবে ওভার ভাওয়ানো যাবে না। ধন্যবাদ
আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url