বেশি লেবু খাওয়ার অপকারিতা সমূহ
লেবু কার না পছন্দ। লেবু বিভিন্ন ভাবে আমরা খেতে পছন্দ করি। কেউ খাবারের সাথে আবার কেউ পানির সাথে মিশিয়ে পান করে থাকি। কিন্তু আমরা কি জানি বেশি লেবু খাওয়ার অপকারিতা সমূহ। ঠিকই শুনেছেন। অতিরিক্ত বেশি লেবু খেলে আমাদের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও বেশি লেবু খাওয়ার ফলে দাতের এনামেল ক্ষয় সহ অনেক ধরনের ক্ষতি করে থাকে।
আমরা শারীরিক পরিশ্রম, খেলাধুলা বা বেশি গরম লাগলেই সহয় উপায়ে লেবুকে বেচেঁ নিয়। লেবুর সরবত আমাদের কাছে খুব জনপ্রীয়।আমাদের শরীর গরম হয়ে গেলে লেবুর শরবত শরীরের স্বাভাবীক তাপমাত্রায় ফিরে আসতে অনেকাংশে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও সকালে গরম পানিতে লেবু রস মিশিয়ে খেলে আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
অনেক উপকারী হিসাবে লেবুর রস কাজ করেলেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই চলুন বেশি লেবু খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
ভূমিকাঃ
লেবুতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।কিন্তু আমরা লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে জানলেও এর পাশ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানিনা। সম্প্রতি ব্রাজিলের National Institute of Dental and Craniofacial Research গবেষনার মাধ্যমে জানা যায় সফট্ ড্রিংক খেলে আামদের দাঁতের যে সমস্যা হয় লেবুর থেকেও একই সমস্যা হতে পারে। তাই যারা প্রতিদিন সকালে লেবু পানি পান করে তাঁরা যদি দিনে কমপক্ষে দুবার দাঁত ব্রাশ করে তাহলে দাঁতের সমস্যা অনেক কম হবে।
আরো জানুন: উন্নত জাতের গরু পালন-কম পুঁজিতে গরু পালন
বেশি লেবু খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে সংক্ষেপে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- লেবু সাধারণত চট ও অম্লীন প্রকৃতির হয়ে থাকে। তাই প্রতিবেদনের বলা হয়েছে বেশি লেবু খেলে বা পান করলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে।
- অতিরিক্ত লেবু খেলে পেটফাঁপা, আলসারের সমস্যা ছাড়াও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে তাদের জন্য লেবু পানি পান করা ঠিক নয়, যা ক্ষতির কারন হতে পারে।
- বেশি লেবু খাওয়ার অপকারিতা হিসাবে মুখে ঘা হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।
- লেবু একটি সাইট্রাস জাতীয় ফল। তাই সাইট্রাস জাতীয় ফল খাওয়া মাইগ্রেনকে ট্রিগার করতে পারে।
- অতিরিক্ত এ্যাসিডিট উপাদানের কারনে আলসার দেখা দিতে পারে। তাই আলসারের রুগীতের জন্য বেশি লেবু খেলে সমস্যার সম্মুখিন হতে পারেন।
বেশি লেবু খাওয়ার অপকারিতা
নিয়মিত খাবারের সাথে ভিটামিন সি যোগ করলে শরীরের অনেক রকম উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও রক্ষের সাথে থাকা আয়রন শোষন করে এবং হাড়ের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের প্রতিদিন যে পরিমান ভিটামিন সি এর প্রয়োজন তা সাধারণ খা্দ্যের মধ্যে পাওয়া যায়না। তাই আমরা খাবারের সাথে লেবু খেয়ে থাকি। আর লেবু ভিটামিন সি এর অভাব পুরন করে এছাড়াও লেবুতে রয়েছে পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি-৬।
কিন্তু আমরা লেবু শুধু খেয়েই থাকি সকালে গরম পানির সাথে আমার দুপুরে খাবারের সাথে এছাড়াও গরম স্যুপের সাথে। কিন্তু আমরা জানি কি গরম ফুটন্ত খাবারে লেবুর মান অক্ষুন্ন থাকে থাকে না।
আসুন বেশি লেবু খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিয়ঃ
দাঁতের এনামেল ক্ষয়ঃ
লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এ্যাসিড যার ফলে অতিরিক্ত লেবু খেলে দাঁতেরে এনামেল ক্ষয় হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। দাঁতের উপর সাদা স্তর পড়ে যায়। সম্প্রতি ব্রাজিলের National Institute of Dental and Craniofacial Research গবেষনার মাধ্যমে জানা যায় সফট্ ড্রিংক খেলে আামদের দাঁতের যে সমস্যা হয় লেবুর থেকেও একই সমস্যা হতে পারে।
এ্যাসিড এবং বমি হওয়ার সম্ভাবনাঃ
ভিটামিন সি শরীরের জন্য অনেক প্রয়োজন তাই বলে অতিরিক্ত বেশি কখনো তা ভালো নয়। আমরা যদি অতিরিক্ত লেবুর রস খাই তাহলে সেখান থেকে এ্যাসিড হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় এবং সেই সাথে বমি বমি হতে পারে।
মুখমন্ডলের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ঃ
অতিরিক্ত মাত্রায় দীর্ঘদিন ধরে লেবু খেতে থাকলে মুখের মধ্যেকার নরম কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এবং তার প্রভাবে মুখের মধ্যে ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পেট খারাপঃ
আমরা সাধারণ খাবার হজম করার জন্য লেবু পানি খেয়ে থাকি। কারন লেবুতে থাকা এ্যাসিড হজম করার জন্য অনেক কার্যকরী। কিন্তু জানা দরকার যে অতিরিক্ত এ্যসিড এর কারনে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সবসময় খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে লেবুর আমাদের খাওয়া উচিত।
মাইগ্রেনের সমস্যাঃ
লেবু একটি সাইট্রাস জাতীয় ফল। আর সাইট্রাস ফলগুলিতে থাকা টাইরামাইন নামক বিশেষ উপাদানের কারনে মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে যা অনেক বিশেজ্ঞদের মতে।
ডিহাইড্রেশনঃ
গরমকালে ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচার জন্য আমরা লেবু পানি পান করি। কিন্তু লেবু পানি পান করার ফলে ডিহাইড্রেশন সমস্যা দেখা দিতে পারে। লেবু পানি পান করার ফলে ঘন ঘন প্রসাব হয় যার কারনে শরীরের পানিশূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে। মুলকথা ইলেক্ট্রোলাইটস এবং সোডিয়ামের মত উপাদানগুলির কারনে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হয়।
রক্তে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াঃ
ভিটামিন সি রক্ষে আয়রনকে সংরক্ষন করতে সাহায্য করে। কিন্তু বেশি লেবু খাওয়ার ফলে শরীরে ভিটামিন সি এর পরিমান বেড়ে যায়। যা অধিক পরিমান আয়রন সংরক্ষন করে যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে পড়ে।
উৎসেচক ভেঙে ফেলেঃ
খালি পেটে লেবু খেলে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচকগুলো ভেঙ্গে ফেলে। পেপসিন আমাদের হজম করতে সাহায্য করে। লেবুর রসে সাইট্রিক এ্যাসিড পেপসিনকে ভেঙে ক্ষতিকর এনজাইম তৈরি করে। যার ফলে খাবার ঠিকমতো হজম হয়না যা আলসার হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলে।
সানবার্নঃ
লেবুতে অনেকের এলার্জি রয়েছে কিন্তু আমরা জানিনা। তাই লেবু খেয়ে রোদে গেলে আমার স্কিনে লাল লাল র্যাশ দেয়া দিয়ে থাকে। কোন কোন সময় কালো ছোপও দেখা দিতে পারে। আমরা একে সানবার্ন বলে থাকি।আসলে এটি সানবার্ন নয় ডাক্তারি ভাষায় একে সাইটোফোটোডার্মাটাইটিস বলা হয়।এছাড়াও অতিরিক্ত লেবুর রস স্কিনে স্কিন ক্যানসার ডেকে আনে।
উপসংহারঃ
তবে যায় হোক লেবু অনেক উপকারি একটি ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। তাই সঠিক নিয়ম মেনে সহনিয় পরিমান লেবু রস বা লেবু পানি পান করা উচিত। যাতে আমাদের ক্ষতির দিকে ঠেলে না দিয়ে আমাদের উপকার বয়ে আনতে পারে।
লেখকের মতামতঃ আমাদের প্রতিদিন ১২০ মিলি লিটার পর্যন্ত লেবুর রস খাওয়া যেতে পারে। অথ্যাৎ প্রতিদিন ফলের রস ও লেবুর রস মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১২০ মিলি লিটার। এর বেশি খাওয়া আমাদের পক্ষে ক্ষতিকর। উল্লেখ্য যে যাতের অর্থ্যাৎ গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে এবং যাদের দুদ্ধ জাতীয় খাবারের সমস্যা রয়েতে তাঁরা ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ নিয়ে লেবু খাবেন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া লেবু খাবেন না। ধন্যবাদ
আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url