লেবুর উপকারিতা সমূহ আমাদের জেনে রাখা দরকার
লেবু নামটার সাথে পরিচিত নয় বা লেবু খায়না এমন মানুষ পাওয়া যাবেনা। লেবু মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী একটি ফল। লেবু নামের উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত শব্দ নিম্বু থেকে। যার অর্থ নিমু, পরিশেষে নিমু নাম থেকে লেবু নামকরন করা হয়েছে। লেবুর উপকারিতা সমূহ ব্যাপক। ঠান্ডালাগা সর্দি বা হাঁচি কাশির মত সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে লেবু। কমবেশি সারা দেশে উৎপাদন করা হয়ে থাকলেও শুধু মাত্র সিলেটে প্রায় ৭০-৮০ প্রজাতির লেবু উৎপাদন হয়ে থাকে।
বিভিন্ন লেবু বিভিন্ন সাইজের, রং এবং আকারের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। কিছু প্রজাতির লেবু টক আবার কিছু প্রজাতীর লেবু মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। নামের দিক থেকেও এর ভিন্নতা রয়েছে যেমন কালামুন্সি, কাগজি, এলাচীলেবু প্রভিতি টক জাতীয় লেবু অন্যদিকে সুইট অরেঞ্জ, মাল্টা, চাইনীজ কমলা, কমলা যা মিষ্টি প্রকৃতির লেবু অপরদিকে বাতাবি লেবু টক মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে।
ভূমিকাঃ
লেবুতে প্রচুর পরিমান ভিটামিস সি রয়েছে। যা আমাদের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। লেবু আমাদের দেশের আনাচে কানাচে হাট বাজারে বহুলভাবে পাওয়া যায়। লেবু সারা বছরে পাওয়া গেলেও এর একটি মৌসুম রয়েছে। বিভিন্ন জাতের লেবুর বিভিন্ন স্বাদ, গন্ধের হয়ে থাকে। লেবু আমাদের জীবনের জন্য এক বিশেষ উপকারী ফল। তাই আসুন লেবুর বিশেষ বিশেষ উপকারীতা সমূহ জেনে নেওয়া যাক।আরো জানুন: উন্নত জাতের গরু পালনের পদ্ধতি
লেবুর উপকারিতা সমূহঃ
একদিকে লেবু যেমন আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর চাহিদা পুরন করে ঠিক সেই সাথে সাথে আমাদের বিভিন্ন সমস্যার থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। তাই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় লেবু রাখা প্রয়োজন। তাই আসুন আমরা লেবু সম্পর্কে এর উপকারিত সমূহ বিস্তারিত ভাবে জেনে নিয়।
ঠান্ডালাগা সর্দি থেকে মুক্তিঃ
অনেক সময় ঠান্ড লেগে সর্দি লাগে যার ফলে নাক দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ে। এমন সমস্যা হয়ে থাকলে আপনি রং চায়ের সাথে আধ টুকরা লেবুর রং ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এরসঙ্গে কয়েকটুকরা আদা দিতে পারেন। একবার খাওয়ার ১-২ ঘন্টার পর আবার খেতে থাকুন উপকারে আসবে ইনশাল্লাহ।হাঁচি-কাশি থেকে মুক্তিঃ
কারো যদি অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ থেকে থাকে তাহলে সেই সাথে কাশির প্রভাবও বেড়ে যায়। হঠাৎ সর্দি লাগার ফলে গলা ভেঙ্গে যায়। এরুপ ক্ষেত্রে একটি লেবু মাঝ বরাবর কেটে তার উপর লবন দিয়ে হালকা আচে গরম করতে থাকুন যতক্ষন পর্যন্ত না লবন গলে লেগে যায় লেবুর সঙ্গে। তার পর সেটি নামিয়ে সহনিয় গরম অবস্থায় জিভের উপর নিয়ে নিয়ে চেটে চেটে খেতে থাকুন। এভাবে ২-৩ বার খেলে উক্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন ইনশাল্লাহ।
খাদ্যে অরুচি ও পেটফ্যাপা থেকে মুক্তিঃ
খাদ্যে অরুচিতে লেবুর বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। যেমন কারো যদি কোন কিছু দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে না করে সে ক্ষেত্রেও সে অনায়াসে লেবু ও লবন ছিয়ে ভাত খেতে পারে। এছাড়া ভাতের সঙ্গে লেবু খেলে বদ হজম দুর হয় এবং পেট ফ্যাপার ভয় থাকে না। এছাড়াও যদি লেবু রস পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করে থাকেন তাহলেও আপনার পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন ইনশাল্লাহ।
ক্লান্তিরোধঃ
ক্লান্তিরোধে লেবু পানির জুড়ি নেয়। খেলাধুরা বা অধিক পরিশ্রমের ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এছাড়াও আপনি যদি একটানা কাজ করে থাকেন তাহলেও শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। আপনি যদি আপনি যদি একটি লেবুর রস সামান্য লবন দিয়ে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খালে আপনার শরীরের ক্লান্তি দুর হবে খুব তাড়াতাড়ি।খুশকিঃ
খুশকির কারনে চুলের ব্যপক ক্ষতি হয়ে থাকে। খুশকি লোক সমাজে একটি লজ্জাজনক বিষয়। খুশকির জন্য অনেকে বিভিন্ন নামি দামি ব্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করেও কোন ফল পাননি। তাই একটি লেবুর রস তার গরম পানিতে শিয়ে গোসলে আগে চুলের গোড়ায় দিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকুন। রস শুকিয়ে যাওয়ার পর গোসন করুন এবং শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। আপনি অন্তত এভঅবে ৩-৪ বার ব্যবহার করতে থাকুন তাহলে খুশকি আর থাকবেনা।পাকা চুল কাল করতেঃ
পাকা চুল কাল করার জন্য আমলকি চেছে নরম করতে হবে এবং তার সাথে লেবু রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় দিতে হবে।এতে করে পাকা সাদা চুল কাল হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে। এছাড়াও আরেক পদ্ধতিতে পাকা চুল কাল করা যায় আর তা হলো ২ চা চামচ হেনা পাওডার, ২ চা চামচ চা-পাতি ও ২ চা চামচ মধু এক সঙ্গে একটি পাত্রে নিয়ে ফেটাতে হবে।পরবর্তীতে এর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিন এবং পানি দিয়ে তা ফুটিয়ে নেওয়ার পর তা ঠান্ডা করে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালো করে মাখিয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে ২-৩ বার অনুসরন করতে থাকুন। আপনার পাকা চুল কাল হবে।দাঁতের পাথর বা কালো দাগঃ
আপনার দাঁতে পাথর বা কালো দাগ হয়ে থাকলে আধা চা চামচ খাবার সোডা ও লবন এক সঙ্গে করে তার সাথে লেবুর রস দিলে আ গ্যাজা হয়ে উঠবে। পরবর্তীতে এর সাথে টুথপেস্ট বা টুথপাওডার মিশিয়ে ২-৩ মিনিট ব্রাশ করুন তাহলে দেখবেন আপনার দাঁতের হলদে দাগ দুর হবে এবং দাঁত থাকবে সাদা ঝকঝকে। এভাবে মাসের ১ বার ব্রাশ করতে পারলে দাঁতের পাথর এবং কালো দাগ দুর হয়ে যাবে।মেদবৃদ্ধি, গীটবাথ ও কোষ্ঠ্যবদ্ধতাঃ
মেদবৃদ্ধি, গীটবাথ ও কোষ্ঠ্যবদ্ধতা এর ক্ষেত্রে লেবু জলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। উপরোক্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিদিন সকালে বাশি পেটে গরম পানির সাথে লেবু রস মিশিয়ে নিয়মিত থাকলে পারি। তাহলে মেদবৃদ্ধি, গীটবাথ ও কোষ্ঠ্যবদ্ধতা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।কৃমিরোগঃ
কৃমি রোগ সাধারাণত বড়দের তুলনায় শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। তাই শিশুদের লেবুর রস খাওয়ানো উচিত। ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের এই রোগ হয়ে থাকলে একটি কাগজি লেবুর অর্ধেক ২ কাপ সহনীয় পর্যায় গরম পানির সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খাওয়াতে হবে। বড়দের ক্ষেত্রে একটি লেবুর পুরো ব্যবার করতে পারেন।দাদ নিরমুল করার ক্ষেত্রেঃ
দাদ রোগ লেবু দিয়ে অতি সহযেই সারানো যায়। এটি করতে একটি কাগজি লেবুর মাঝবরাবর চিরে তা দিয়ে দাদের উপর কিছু সময় ধরে ঘষতে থাকুন। এভাবে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার ঘষলে ১০-১৫ দিনের মধ্যে দাদরোগ ভালো হয়ে যাবে। এভাবে একই নিয়মে মেছতা রোগের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়।উপসংহারঃ
এছাড়াও লেবু বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। পরিশেষে যায় হোক লেবু উপরোক্ত বিষয় ছাড়াও আমাদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। লেবু মানব দেহে ভিটার সি এর অভাব পুরন করে। তাই লেবু আমাদের সকলের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।লেখকের মতামতঃ লেবু আমাদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ফল। লেবুতে থাকা ভিটামিন আমাদের উপকারের পাশাপাশি আমাদের বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজের একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবারয্য উপাদান। কিন্তু আমরা এর সঠিক ব্যবহার না জানায় এর গুরুত্ব তেমন বুঝতে পারিনা।
আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url