আলু চাষের পদ্ধতি - বিভিন্ন মড়ক চিহ্নিতকরণ ও প্রতিকার

আলু বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান ফসল। উৎপাদনের দিক থেকে আলু চতুর্থ স্থান অধিকার করে আছে। ধান গম ও ভুট্টার পরেই আলুর স্থান।আমাদের দেশেও আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু অনেকেই আলু চাষের পদ্ধতি সমূহ সঠিক ভাবে জানেনা। তাই আলু চাষিদের আগে আলু চাষের নিয়ম ও বিভিন্ন মড়ক চিহ্নিতকরণ ও তার প্রতিকার জানতে হবে।
আলু চাষের পদ্ধতি - বিভিন্ন মড়ক চিহ্নিতকরণ ও প্রতিকার
বাংলাদেশে আলু সাধারণত আলুকে সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। বিভিন্ন তরকারির সাথে আলু না হলেয় নয়। এছাড়াও আলু দিয়ে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার করা সম্ভব এবং আলু বিদেশে রপ্তানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।আলু ভাতের বিকল্প হিসাবে খাওয়া যেতে পারে।আলু অন্তত পৃথিবীর প্রায় ৪০ টি দেশের মানুষের প্রধান খাবার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ভূমিকা

আলু আমাদের দেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাপক ভাবে উৎপাদন হয়ে থাকে । আমাদের দেশের চাষিরা সাধারনত পুরাতন নিয়ম অনুসারে চাষাবাদ করে থাকায় আশানারুপ উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে আলু প্রতি হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১ টন প্রায়। কিন্তু আলু যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধিতিতে চাষাবাদ করা হয় তাহলে এর উৎপাদন ২০ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।

আলু চাষের পদ্ধতি

আলু চাষের পদ্ধতি না জানা থাকলে আলু থেকে আশানারুপ ফলন উৎপাদন করা সম্ভব নয়। তাই আলু চাষ করতে হলে আলু চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি সমূহ জানা দরকার। আসুন আলু আছের পদ্ধতিগুলো জেনে নেয়।

জলবায়ু

চলবায়ু আলু চাষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সকল জলবায়ুতে এর উৎপাদন হয়না। যেমন ২০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রার ওপরে গেলে ফলন কমতে থাকে আবার ৩০ ডিগ্রি সে. এ আলু উৎপাদন ক্ষমতা লোপ পায়। ১০ ডিগ্রি সে. এর নিচে গেলে আলুর গাছের ‍বৃদ্ধি কমে যায়।
এজন্য আলু লাগানোর সময় ২০ - ২৫ ডিগ্রি সে তাপমাত্রা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ তাপমাত্রায় গাছ দ্রুত গজায়। তাই দেখা যায় যে বছর আকাশ ও জলবায় ঠিক থাকে সেবছর আলুর উৎপাদন ১০ - ১৫% বৃ দ্ধি পায়।

মাটি নির্বাচন

আলু চাষের জন্য প্রথমত আমাদের মাটির প্রয়োজন। যে কোন মাটিতে আবার আলু চাষ ভালো হয়না। তাই আমাদেরকে সঠিক ভাবে মাটি নির্বাচন করা আব্যশক।আর আলু চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী মাটি হলো দো-আাঁশ। এ মাটিতে সবচেয়ে আলু চাষ ভালো হয়।

আলুর বীজ নির্বাচন

ভালো ও উন্নতজাতের বীজ ব্যবহার করলে একদিকে যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি পায় অপর দিকে চাষী আর্থিকভাবে লাভবান হয়। তাই আলু চাষের জন্য আমাদের ভালো জাতের বীজ নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশে যে সব স্থানে আলু চাষ হয় তার মধ্যে উচ্চফলণশীল ও দেশী জাতের আলু বীজ চাষ করা হয়। যার মধ্যে ৬৫ ভাগ ‍উচ্চফলনশীল ও ৩৫ ভাগ দেশি জাত চাষ হয়।

দেশি বীজ

দেশি বীজে সাধারণত ফলন একটু কম হয়। দেশি বীজে ফলন কম হলেও এর স্বাদ অতুলনীয়। দেশী জাতের আলুর গড় ওজন ৫ থেকে ৪৫ গ্রাম হয়ে থাকে।দেশি জাতের আলু তুলনামুলকভাবে উন্নতজাতের আলুর চেয়ে দামি।দেশি জাতের আলুর মাধে আশা, চল্লিশা, দোহজারী লাল, ফেইন্তাশীল, হাসরাই, লাল পাকরী, লালশীল, পাটনাই, সুর্যমুখী প্রভৃতি।

উচ্চফলনশীল

১৯৬০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যেসব উন্নত জাতের আলুর চাষ হচ্ছে তার মধ্যে হিরা, আইলসা, মুল্টা, ডায়মন্ট, কার্ডিনাল, মন্ডিয়াল, কুফরী সিন্দুরী, চমক, গ্রানোলা, ক্রিওপেট্রা ও চিনেলা জাতটী সবচেয়ে বেশি চাষ হয়ে থাকে।
এছাড়াও বারি টিপক্রস-১, বারি টিপিক্রস-২, হাইব্রিড জাতের আলু-৪ (আইলসা), বারি আলু-৭ (ডায়ামন্ট), বারি আলু-৮ কার্ডিনাল, বারি আলু-১১ চমক, বারি আলু-১২ ধীরা, বারি আলু-১৩ গ্রানোলা, বারি আলু-১৫ বিনেলা, বারি আলু-১৬ আরিন্দা, বারি আলু-১৭ রাজা, বারি আলু-১৮ বারাকা, বারি আলু-১৯ বিন্টজে, জারলা জাত রয়েছে।

উৎপাদন পদ্ধতি

বাংলাদেশের কৃষক আলু উৎপাদনের বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। কিন্তু এগুলো কোনটিই বিজ্ঞান সম্মত নয়। তাই বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে একদিকে যেন কৃষন লাভবান হবে অন্য দিনে উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।
উৎপাদন মৌসুম
বাংলাদেশে সাধারণত নভেম্বর মাসের আগে আলু লাগানো যায় না, কারণ তার আগে জমি তৈরি সম্ভব হয় না। নভেম্বরের পরে আলু লাগালে ফলন কমে যায়। এ জন্য উত্তরাঞ্চলে মধ্য-কার্তিক (নভেম্বর প্রথম সপ্তাহ), দক্ষিণাঞ্চলে অগ্রহায়ণ ১ম সপ্তাহ থেকে ২য় সপ্তাহ (নভেম্বর মাসের মধ্য থেকে শেষ সপ্তাহ)।

বীজের হার

প্রতি হেক্টরে ১.৫ টন। রোপনের দূরত্ব ৬০x২৫ সে.মি (আস্ত আলু) এবং ৪৫x১৫ সে.মি (কাটা আলু) কৃষকদের ঘরে সংরক্ষিত দেশি জাতের আলু বীজ খুব নিকৃষ্টমানের হয়ে থাকে। কোন কোন সময় আবার হিমাগারে থাকা অবস্থায় আলুর মাঝ বরাবর দাগ পড়ে যায়। সাধারণত ৩৫ ডিগ্রি সে এর উপরে থাকলে বা অক্সিজেন বিহীন অবস্থায় থাকলে এমনটি হয়। এ রোগটিকে ব্লাকহার্ট রোগ বলে।

বীজ শোধন

যদি সম্ভব হয় আলু বীজকে মারকিউরিক ক্লোরাইড এক গ্রাম নিয়ে ২ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১-২ ঘণ্টা ডুবিয়ে নিলে ভালো হয়। আবার বোরিক এসিডের ০.৫% দ্রবণে আলু বীজ ১৫-৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখলেও ভালো ফল পাওয়া যায়। কাটা বীজ বা গজানো বীজ শোধন করা যাবে না।

সারের পরিমাণ

কৃষকেরা যদি আলুর উচ্চফলন পেতে চান তাহলে সুষম সারের বিকল্প নেই। সাধারণ কৃষকের জন্য আলু চাষে নিম্নোক্ত হারে সার ব্যবহার করা প্রয়োজন।
ইউরিয়া - ২২০-২৫০ কেজি/হেক্টর
টিএসপি - ১২০-১৫০ কেজি/হেক্টর
এমওপি - ২২০-২৫০ কেজি/হেক্টর
জিপসাম - ১০০-১২০ কেজি/হেক্টর
জিংক সালফেট - ৮-১০ কেজি/হেক্টর
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট - ৮০-১০০ কেজি/হেক্টর (অম্লীয় বেলে মাটির জন্য)
বোরন - ৮-১০ কেজি/হেক্টর
গোবর - ৮-১০ টন/হেক্টর
জমিতে যদি সবুজ সার প্রয়োগ করা হয় তাহলে গোবরের প্রয়োজন নেই।

সেচ

আলু একটি শীতকালী সবজি। শীতকাল সাধারণত শুষ্ক আর এজন্য আলু চাষে সেচের প্রয়োজন হয়। আলুতে পানি সেচ কম হলে আলুর উৎপাদন মারাত্বক ভাবে হ্রাস পায়। সেই জন্য আলু বোপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে ১ বার সেচ দিতে হবে। ৪০৪৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় সেচ এবং ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে আরেকটি সেচ দিতে হবে। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে ৮-১০ দিন পর সেচ দিলে বেশি ফলন বেশি পাওয়া যায়।

পরিচর্যা

আলু লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর গোড়ায় মাটি দেয়া দরকার এবং সেই সাথে আগাছা দমন করতে হবে।
আলু মাঠে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন রোগ দেখা যায়। এর মধ্যে আলুর মড়ক রোগ, আলুর আগাম রোগ যা পাতা পোড়ানো বা কুঁচকে যাওয়ার মতো দেখায়, কাণ্ড ও আলু পচা রোগ, ঢলে পড়া ও বাদামি পচন রোগ, আলুর দাঁদ রোগ, আলুর মোজাইক রোগ, আলুর শুকনো পচা রোগ, আলুর নরম পচা রোগ অন্যতম।
রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। রোগ দেখা দিলে সেচ দেয়া বাদ রাখতে হবে এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে বালাইনাশক দিতে হবে।

পোকামাকড় দমন

আলু ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় দেখা যায়। এদের মধ্যে আলুর কাটুই পোকা অন্যতম। এ পোকার কীড়া বেশ শক্তিশালী ৪০-৫০ মিমি লম্বা হয়। এ পোকা চারা গাছ কেটে দেয় এবং আলুতে ছিদ্র করে এজন্য আলুর ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাটুই পোকার প্রকোপ বেশি না হলে কাটা আলু গাছ দেখে তার কাছাকাছি মাটি উলটপালট করে কীড়া খুঁজে বের করে মেরে ফেলতে হবে।

এছাড়াও প্রতি লিটার পানির সাথে ডারসবান ২০ ইসি ৫ মিলি হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটি ভিজিয়ে ৩০-৪০ দিন পর স্প্রে করতে হবে। আলুর সুতলি পোকা ও আলু উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত করে। এ পোকা দেখতে ছোট, ঝালরযুক্ত, সরু ডা বিশিষ্ট ধূসর বাদামি রঙের হয়ে থাকে।

পূর্ণাঙ্গ পোকা সাদাটে বা হাল্কা গোলাপি বর্ণের এবং ১৫-২০ মিমি লম্বা হয়। এ পোকা আলুর মধ্যে লম্বা সুড়ঙ্গ করে আলুর ক্ষতি করে থাকে। কৃষকের বাড়িতে রাখা আলু এ পোকা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আসুন এবার বিভিন্ন রোগের নাম, লক্ষন ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
রোগের নাম আলুর পাউডারী মিলডিউ রোগ।


লক্ষন
পাতা ও গাছের গায়ে সাদা সাদা উডারের মত গাদ দেখা যায়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।
আক্রান্ত বেশি হলে পাতা হলুদ ও কালো বর্ণের হয়ে যারা যায়।
দমন ব্যবস্থা
সম্ভব হলে গাছের আক্রান্ত অংশ ধরে কেটে ধ্বংস করে ফেলুন
ক্ষত পরিষ্কার রাখুন এবং পানি নিষ্কাষনের ভালো ব্যবস্থা রাখুন।
আগাম বীজ বপন করুন
সুষম সার ব্যবহার করা আবশ্যক।
ম্যানকোজেব+মটোলোক্সিল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম/লিটার হারে অথবা সালফার ছত্রাক নাশক যেমন কুমুলাস ৪ গ্রাম বা গেইভেট বা মনোভিট অথবা থিওভিট ২ গ্রাম অথবা কার্বেন্ডাজমি গ্রুপে ছত্রাকনাশক যেমন গোল্ডাজমি ০.৫ মি লি বা এমকোজমি বা কিউবি অথবা চ্যামপিয়ন ২ গ্রাম / লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ভালো রোগ প্রতিরোধ জাতীয় বারি উদ্ভাবিত বা উন্নত জাতের চাষ করতে হবে।
আগাছা পরিষ্কার রাখুন

রোগের নাম
আলুর ব্ল্যাক লেগ রোগ

রোগের কারণ

Erwinia carotovora নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারনে সাধারনত এ রোগ হয়ে থাকে।
লক্ষন

এই রোগ বীজ আলুর একটি প্রধান রোগ।
আক্রান্ত গাছের গোড়ার দিকে বাদামী থেকে কালো রঙের দাগ পড়ে এবং যা সহজেই সুস্থ্য অংশ থেকে আলাদা করা যায়।
আক্রান্ত গাছের ডাল তুলে নাকের কাছে ধরলে এক ধরণের পঁচা আলুর মতো গন্ধ পাওয়া যায়। এবং আক্তান্ত গাছের আলু পচে যায়।

উচ্চ তাপমাত্রা ও জমির উচ্চ আর্দ্রতা এ রোগের বিস্তারের জন্য সহায়ক।
এ রোগটি সাধারনত বীজ ও মাটিবাহিতা।
দমন ব্যবস্থা
অতিরিক্ত সেচ পরিহার করা
প্রত্যায়িত অথবা রোগমুক্ত বীজ সংগ্রহ করে বোপন করা।
উচ্চ তাপ এড়ানোর জন্য আগাম চাষ করা।
আলু দেখে শুনে ভালো ভাবে যাচাই বাচাই করে হিমাগারে সংরক্ষন করা।
আলু লাগানোর পূর্বে জমির শেষ চাষের পূর্বে হেক্টরে ২০-২৫ কেজি হারে স্ট্যাবল ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করতে হবে।
বপনের পরে যত দ্রুত সম্ভব গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া।
রোগটি দেখা মাত্র জমিতে সেচ বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজন হলে আক্রান্ত স্থান ব্যতিত পানি সেচ করা।
রোগের নাম আলু নরম পচা রোগ

লক্ষন
আক্রান্ত আলুর কোষ পচে যায়।
পচা আলু হতে দুগন্ধ বের হয়।
চাপ দিলে আলু থেকে পানি বের হয়।
দমন ব্যবস্থা
সুস্থ ও রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করা
অতিরিক্ত সেচ পরিহার করতে হবে।
রোগের নাম আলুর শুকনো পচা রোগ।
লক্ষন
আলুর গাছে কিছুটা গভীর কালো দাগ পড়ে।
আলুর ভিতরে গর্ত হয়ে যায়।
প্রথম পচন যদিও ভিজা থাকে পরে তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়।
আক্রান্ত স্থানে গোলাকার ভাঁজ পড়ে ও কখনো কখনো ঘোলাটে সাদা ছত্রাক জালিকা দেখা দিতে পারে।
দমন ব্যবস্থা
আলু ভালো ভাবে বাচাই করে সংরক্ষন করতে হবে।
ডাইথেন এম ৪৫ দ্রবণ ০.২% দ্বারা বীজ শোধন করা।
প্রতি কেজিতে ২ গ্রাম টেটো গুড়া দিয়ে আলু বীজ শোধন করতে হবে।

রোগের নাম
ভাইরাস জনিত রোগ
লক্ষন
পাতায় বিভিন্ন ধরনের দাগ পড়ে এবং পাতা বিকৃত ও ছোট হয়ে যায়।
বিভিন্ন জাতের আলুর ভিন্নতার কারনে এ রোগ ভিন্ন হয়।
পতা ছুলে পড়ে এবং পরবর্তীতে গাছ মারা যায়।
এ ভাইরাসে আলু আক্রান্ত হলে আলুর আকার ছোট হয় এবং আলুর উৎপাদন মারাক্তকভাবে হ্রাস পায়।

দমন ব্যবস্থা
সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
ভাইরাসের বাহক পোকা দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ভাইরাস মুক্ত বীজ ব্যবহার করা।
তারাতারি বা আগাম বীজ পোন করা ও আগাম ফসল সংগ্রহ করা।
জমি আগাছা মুক্ত করা।
সারিতে ভালভঅবে মাটি উচু করে দেয়া।
আলু গাছ গজানোর সাথে সাথে নিয়মিতভাবে ভাইরাস আক্রান্ত গাছ খুজে বের করে মাটির নিচে পুতে রাখা।
রোগের নাম আলুর পাতা মোড়ানো রোগ।
লক্ষন
আ্ক্রান্ত গাছের পাতা খসখসে ও উপরের দিকে কুছরে যায়।
পাতার রং হালকা হলদেটে সবুজ হয়ে যায়
গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং খাটো ও মোট হয়ে গাছ দাড়িয়ে থাকে।
আলুর সংখ্যা কম হয় এবং আলু ছোট ছোট হয়। ফলন কমহয়।

দমন ব্যবস্থা
ভালো রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
আক্রান্ত গাছ টিউবার সহ তুলে ফেলতে হবে।
ভাইরাস রোগের বাহক জাবপোকা দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রোগের নাম আলুর ঢলে পড়া রোগ



রোগের কারন
Ralstonia solanacearum নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে ।
লক্ষন
গাছের যে কোন বয়সে এ রোগ দেখা যায়।
গাছ হঠাৎ ঢলে পড়ে।
গোড়ার দিকের গাছের কান্ড ফেড়ে দেখলে বাদামী দাগ হয়ে যায়
এ রোগ হলে গাছ সাধারণত সবুজ অবস্থাতে ডলে পড়ে।
দমন ব্যবস্থা

ভালো রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়ে বা পুতে ফেলতে হবে।
আলু লাগানোর ২০-২৫ দিনের আগে জমিতে ব্লিচিং পাউডার বিঘা প্রতি ২-৬ কেজি ব্যবহার করতে হবে।
পরিমিত সেচ প্রয়োগ করতে হবে।
রোগের নাম আলুর গাদ বা স্ক্যাব রোগ
রোগের কারন
Sterptomyces scabies নামক জীবাণুর আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে ।

লক্ষন
হালখা দাদ হলে টিউবারের উপরে উচু এবং ভাসা বিভিন্ন আকারের বাদামী গাড় পড়ে।
রোগের গভীর দাদে গোলাকার গর্ত বা ডাবা গাদ পড়ে।
রোগের আক্রমণ সাধারণত ত্বকেই সীমাবদ্ধ থাকে। উচ্চ তাপমাত্রা এবং উচ্চ আর্দ্রতা এ রোগ বিস্তারে সহায়ক।

দমন ব্যবস্থা
জমিতে বেশি মাত্রা ইউরিয়া ব্যবহার কমাতে হবে।
এ রোগে আক্রান্ত আলু কখনো বীজ হিসাবে রাখা যাবেনা।
সেচের তারতম্যের কারণে অনেক সময় দাঁদ রোগের সূচনা হয়। দাঁদ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আলু লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর্যন্ত কোন অবস্থাতেই মাটিতে রসের যেন ঘাটতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
আলুর টিউবার ধারণের সময় ৩৫-৫৫ দিন পর্যন্ত পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা করা।
আলু উত্তোলনের আগে মাটিতে বেশী রস থাকলে আলু দাঁদ রোগে আক্রান্ত হতে পারে, এ জন্য গাছের বয়স ৭০ দিনের পর সেচ বন্ধ করা।
বীজ আলু চাষের পূর্বে জমিতে সরিষা, কাউন, সয়াবিন দ্বারা সবুজ সারে চাষ করা।
শষ্য পর্যায়ে জমিতে গম বা ডাল জাতীয় ফসল চাষ করা।
রোগের নাম আলুর কান্ড পচা রোগ
লক্ষন
এ রোগের আক্রমনের ফলে বাদামী গাদ কান্ডের গোড়া ছেয়ে ফেলে।
গাছ ঢলে পড়ে এবং নিচের পাতা হলদে হয়ে যয়।
আক্রান্ত স্থানে এবং আক্রান্ত স্থানের আশেপাশের মাটিতে সাদা জালিকা দেখা যায়।
আলুর গা থেকে পানি বের হয় এবং পছন বের হয়।
দমন ব্যবস্থা
আক্রান্ত গাছ কিছুটা মাটি সহ সরিয়ে ফেলতে হবে।
জমি গভীর ভাবে চাষ করে কয়েক দিন ফেলে রাখা।
জমিতে পচা জৈব সার প্রয়োগ কর েহবে।
বীজ বপনের পূর্বৈ আলু বীজ শোধন করা
রোগের নামআলুর আগাম ধ্বসা রোগ Early Blight of Potato (Alternaria solani) ছত্রাকজনিত রোগ।
লক্ষণঃ
নিচের পাতা ছোট ছোট বাদামী রংয়ের অল্প বসে যাওয়া কৌনিক দাগ পড়ে।
আক্রান্ত অংশে সামন্য বাদামী এলাকাকর সাথে পর্যায়ক্রমে কালচে রংয়ের চক্রাকার দাগ পড়ে।
পাতার বোটা ও কান্ডের দাগ অপেক্ষাকৃত লম্বা ধরনের হয়।
গাছ হলদে হয়, পাতা ঝরে পড়ে। অকালে গাছ মারা যেতে পারে।
দমন ব্যবস্থা
সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত বীজ বপন করা।
রোগ মুক্ত বীজ সংগ্রহ করা।
প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতের চাষ করা।
সুষম সার প্রয়োগ এবং সময়মত ও পরিমিত সেচ প্রয়োগ করা।
রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতি লিটার পানিতে রোভরাল ২ গ্রাম ও ডায়থেন এম- ৪৫, নেমিসপোর ২ গ্রাম মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর স্প্রে করা (পাওয়ার স্পেয়ার দিয়ে)।

উপসংহার

আলু চাষ সাধারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হয়ে থাকে। আমাদের দেশের এর ব্যাপক আবাদ করা হয়। আমরা এ ই উৎপাদিত আলু বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি েআলু চাষ না করার করনে আমরা আশানারুপ ফসল উৎপাদন করা করতে পারিনা। তাআ আমাদের উপরোক্ত তথ্য ভালো ভাবে বিশ্লেষন করে আলুচ চাষ করা প্রয়োজন।

লেখকের কথা আলু চাষ সাধারণত একটি নেশা জাতীয় কৃষি আবাদ। অনেক মানুষ একে বানিজ্যিক হিসাবে গ্রহণ করেছে। কিন্তু আমাদের উজিত অতিরিক্ত রিক্স নিয়ে এই ফসল করলেও সঠিক তথ্য না জানার কারনে আশানারুপ ফসল উৎপাদন করতে পারেনা। উপরোক্ত পোষ্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url