উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ - রক্তচাপ প্রতিকারের উপায়

আমরা বর্তমানে আধুনিক জীবন যাত্রায় ব্যস্ত। শরীরের তেমন খেয়াল রাখার সময়টুকু কারো হাতে নাই বললেই চলে। আমরা নিজেরদের খেয়ালখুশি মত চলার জন্য আমাদের নিজেদের অজান্তে আমাদের শরীরে নানাবিধ রোগের সৃষ্টি হয়। আর উচ্চ রক্তচাপ তার মধ্যে অন্যতম একটি রোগ। তাই উচ্চ রক্তচাপের লক্ষন সমূহ আমাদের জানা আবশ্যক।
 
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ - রক্তচাপ প্রতিকারের উপায়

আমরা সাধারনত বিভিন্ন কাজের জন্য অনিয়মিত খাদ্যভাস, বাহিরের খাবার, বিভিন্ন ফাস্টফুড, কোল্ড ডিংস ধুমপান ইত্যাদি উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারন। ডাক্তাররা বলছেন এসব খাবার উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রনের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। আর এই হাইপারটেনশন মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঢেলে দিচ্ছে।

ভূমিকা

হাই ব্লাড প্রেশান বা উচ্চ রক্তচাপকে নিরব ঘাতক বলা হয়। এই রোগ আমাদের জীবনযাত্রায় খুবই ব্যপক হারে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ এর উপসরগ গুলো স্বাভঅবিকভাবে বুঝে উঠতে পারেনা অকেকে। আর এ রোগের লক্ষনগুলো না বুঝার কারনে নিজেদের অজান্তে বিপজ্জনক অবস্থা পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে পড়ছি। তাই উচ্চ রক্তচাপের সাধারণ উপসরগ আর প্রতিকারের উপায় সম্মন্ধে আমাদের সকলের জানা উচিত।

উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়

হাই ব্লাড প্রেশার অরথাত হাইপারটেকশানের সঙ্গে আটিরিয়ালস নামক এক ধমনীর সংযোগ রয়েছে। আর এ ধমনীই সারা দেহে রক্ত সঞ্চালনার কাজ করে থাকে। আর যখন এটি পাতলা হয়ে যায় সেই সময় হৃদযন্ত্রকে রক্ত পাম্প করার জন্য বেশি পরিশ্রম করতে হয়। আর এর কারনে রক্তচাপ সম্যসা তৈরি হয়।
উচ্চ রক্তচাপ এর কারনে বিপদ যে কোন সময় আসতে পারে। আর সঠিক চিকিৎসা না হলে যে কোন সময় হাট এ্যাটাক, স্ট্রোকের করার মতো গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে। কিন্তু সব থেকে বড় সমস্যা হলো আমরা অনেকেই এ সমস্যার লক্ষন সহজে বুঝতে পারিনা।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষন

চিকিৎসকদের মতে উচ্চ রক্তচাপ নীরব ঘাতক। কিন্তু এ রোগ বড় আকার ধারন করার আগে আমাদের কিছু সংকেত দিয়ে থাকে যা আমাদের সকলের জানা দরকার। তাই আসুন আমরা উচ্চ রক্তচাপের লক্ষন গুলো সম্পকে জেনে নিয়।

চোখে ঝাপসা দেখা

বিশেষজ্ঞডাক্তারের মতে হঠাৎ করে কেউ যদি চোখের সমস্যায় ভুগতে থাকেন বা দৃষ্টিতে কোন সমস্যা বোধ মনে হয় তাহলে দ্রুত প্রেসার মাপিয়ে নেওয়া উচিত। কারন হঠাৎ চোখে ঝাপসা দেখা প্রেসার এর লক্ষন হতে পারে।

মাথার যন্ত্রণা

বিশেষজ্ঞদের মতে রক্তচাপ ১২০/৮০ থাকাটা স্বাভাবিক আর রক্তচাপ যদি ১৮০/১২০ হয় তবে মাথার যন্ত্রণা হবে। তাই এই রকম সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামরশ নেওয়া উচিত।

বুকে ব্যথা

বুকে ব্যথা শ্বাসকষ্টের সমস্যাও ব্লাড প্রেসার সংক্রান্ত সমস্যার। আপনি যদি দেখেন হঠাৎ খিঁচুনি বা শরীরের লাল দাগ দেখা যায় তাহলে সেটিও ব্লাড পেশারের একটি লক্ষন হতে পারে। 

পা ফুলে যাওয়া

ডাক্তারের মতে হঠাৎ যদি আপনার পা ফুলে যায় তাহলে সেদিকে আপনার বিশেষ দৃষ্টি রাখা উচিত। একইসঙ্গে যদি যদি বমি ভাব বা অ্যাংজাইটির মতো সমস্যা থাকলেও আপনার সতরক থাকা উচিত।

শ্বাসকষ্ট

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় আপনি যখন হাঁটেন কোন ভারি জিনিস তুলে বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামার সময়ে যদি শ্বাসকষ্ট হয় তাহলে আপনাকে সতরক হতে হবে।

নাক থেকে রক্তপড়া

উচ্চ রক্তচাপে কানেও অনেক সময় নাক থেকে রক্ত পড়তে পারে অনেক সময় এই কথা নিশ্চিত করেছে একদল বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ। সেক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামরশ নিতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ প্রতিকারের উপায় বা চিকিৎসা

সাধারনত এই রোগের কোন লক্ষন না থাকায় আমরা অনেকে জানতেও পারিনা যে আামদের এ সমস্যা আছে। উচ্চ রক্তচাপ মাপবার এবং জানবার একমাত্র উপায় হলো নিয়মিত রক্তচাপ মাপা। রক্তচাপ পরিমাপ করা হয় দুটি সংখ্যা দ্বারা।
  • একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ 120/80 mmHg এর আশেমম থাকবে।
  • 120/80 mmHg এর প্রথম সংখ্যাটি 120 সিস্টোলিক রক্তচাপকে বোঝায়। 
  • দ্বিতীয় সংখ্যা অর্থাৎ ৮০ হল ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ। হৃৎপিন্ডের পরপর দুইটি স্পন্দনের মধ্যবর্তী সময়ে ধমনীর দেওয়ালে রক্তচাপকে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বলে।
  • আমাদের শরীরবৃত্তী একেকজনের একেকরকম আর এ ভিন্ন ভিন্ন মানুষের রক্তচাপের মাত্রাও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। একজনের কম বা বেশি সেটি অন্যজনের কাছে স্বাভাবিক হতে পারে। 90/60 mmHg থেকে 120/80 mmHg এই সিামর মধ্যে রক্তচাপ স্বাভঅবিক রক্তচাপ বলা হয়।
সাধারণ ভাবে কারোর উচ্চ রক্তচাপ আছে যা দেখে আপনি ‍বুঝবেন
  • একজন পূর্ণবয়স্কের রক্তচাপের মাত্রা 140/90mmHgএর বেশী থাকে।
  • একজন ৮০ বছর বা তার বেশি বয়স্কের রক্তচাপ 160/90 mmHgএর বেশি থাকে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণে শারীরিক রোগের ঝুঁকি

উচ্চ রক্তচাপ মানবদেহের সুস্থ অবস্থাকে ব্যহত করে থাকে। এর ফলে হাট এ্যাটাক, ব্রেন এবং দেহের অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর রক্তের সরবরাহ ঠিকমতো না হরে কিডনি ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া পায়ে রক্ত চলাচল কমে যাওয়া ধমনীর রোগ এবং ডিমেনশিয়াও হতে পারে। 

হৃদরোগ বা হার্ট ডিজিজ

অতিরিক্ত রক্তচাপের কারনে ধমনীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এবং ধমনীর নমনীয়তা কমে যায়। যার ফলে হৃৎপিন্ডে রক্ত এবং অক্সিজেনের সরবরাহ প্রভাবিত হয়। যার ফলে বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাকা, হার্ট ফেইলিওর এর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

ব্রেন ষ্ট্রোক

উক্ত রক্তচাপের কারনে আমাদের মস্তিষ্কে রক্ত ও রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহ বেড়ে যেতে পারে। এতে ব্রেন ক্লকেজ হযে যেতে পারে এবং ধমনী বাস্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় যা ব্রেন স্ট্রোকের অন্যতম কারন। এবং এর কারনে অনেক শারীরিক অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। যেমন
  • কথা না বলতে পারা
  • হাঁটা চলায় অসুবিধা
  • স্বাভাবিক কার্যকলাপে অসুবিধা
  • অবশেষে মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে।
  • রক্তচাপ ‍বৃদ্ধির কারণ
  • রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ
  • সাভাবিক ভাবে চক্তচাপ মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে অনেক কারনে। তাই এককভাবে রক্তচাপ ‍বৃদ্ধির কারন হতে পারে না। তবু কিছু কারনে রক্তচপ বৃদ্ধি পায় তা উচ্চরক্তচাপ দেখা দেয়। যেমন
  • অতিরিক্ত পরিমানে খাবারের সাথে লবন খাওয়া
  • মদ্যপান করা
  • অস্বাভাবিক ভাবে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাওয়া
  • ধূমপান করা
  • পর্যাপ্ত পরিমান শাকসবজি ও ফলমুল না খাওয়া
  • রাত্রে পর্যাপ্ত পরিমান (৬-৮) ঘন্টা না ‍ঘুমানো
  • অতিরিক্ত চা, কফি, কোল্ডডিংস খাওয়া
  • পরিবারের অন্য কারো উক্ত রক্তচাপের প্রবণতা থাকা
  • শারীরিক পরিশ্রম না করা
  • বায়স পঁয়ষট্টির উর্ধে থাকা।

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা

উচ্চ রক্তচাপ সনাক্ত করা গেলে সাধারণত চিকিৎসক একজন রোগীর বায়স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে যথাযথ ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এবংসেই পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ থেকে হবে। কখনো নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া যাবেনা।

উচ্চ রক্তচাপে ব্যবহৃত কিছু ওষুধের নাম

  • লিসিনোপ্রিল
  • বিভিন্ন ধরনের ডাই-ইউরেটিক
  • এ সি ই ইনহিবিটর
  • বিটা ব্লখার
  • আল্ফা ব্লকার

উচ্চ রক্তচাপ প্রতিকারের উপায়

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহজ পাঁচটি সহজ উপায় রয়েছে। যা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১ নম্বর নিজের দৈহিক ওজনকে বয়স ও উচ্চতা অনুসারে সঠিখ ভাবে ঠিক রাখা। দৈনিক কমপক্ষে ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট শারীরিক বিভিন্ন ব্যায়াম, যোগব্যায়াম নিয়মঅনুসারে করা যা আমাদের হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে।
২ নম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা (WHO) অনুসারে আমাদের খাবারের সাথে প্রতিদিন ৫ গ্রামের বেশি লবন না রাখা বা খাওয়া। বাজারে পাওয়া বিভিন্ন ধারনের নোনটা বিস্কুট, চানাচুর, চিপস ইত্যাদি পরিহার করা।
৩ নম্বর শরিরে পটাশিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য বিভিন্ন রকম ফল ও সবজি খেতে হবে। পটাসিয়াম যুক্ত ফল হলো কলা, রাঙা আলা, বাদাম, আভেঅকাডো ইত্যাদি। এছাড়া দই স্যামন মাছ, টুনা প্রভৃতি খাবার নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
৪ নম্বর ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করা।
৫ নম্বর মদ্যপান করার অভ্যাস থাকলে তা খুব সীমিত মাত্রায় করা। বিভিন্ন গবেষনায় জানা গেছে যে অ্যালকোহল ১৬ শতাংশ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।

উপসংহার

রক্তচাপ মাবন দেহের জন্য একটি নিরব ঘাতক রোগ। অতিরিক্ত রক্তচাপের কারনে এবং এ সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকার কারনে অনেকের স্টোক করার মত সমস্যাও সৃস্টি হয়েছে। তাই আসুন নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য আমারদের অনিয়মিত খাদ্য অভ্যাস ত্যাগ করে নিয়মিত শরীর চর্চা, স্বাস্থ্যকর খাবাও খাওয়া জরুরি। এতে করে নিজে সুস্থ্য থাকবেন এবং সুস্থ্যভাবে বাঁচতে পারবেন।
 
লেখকের মতামতঃ এতোক্ষন সময় দিয়ে উপরোক্ত তথ্যগুলো পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। উপরোক্তক্ত নিয়ম মেনে চলুন যেগুলো পরিহার করার কথা সেগুলো পরিবার করুন সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ব্লগ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url